E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজ্ঞাপনের সাংবিধানিক ভিত্তি দিন : আবীর আহাদ

২০২১ মে ০৮ ১৫:৩২:৫৯
বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজ্ঞাপনের সাংবিধানিক ভিত্তি দিন : আবীর আহাদ

স্টাফ রিপোর্টার : বেশ কিছুদিন পূর্বে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়  মুক্তিযোদ্ধাদের নামের পূর্বে 'বীর' শব্দটি ব্যবহারের যে প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনামা জারি করেছেন, তাকে সাধুবাদ জানিয়ে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান লেখক গবেষক আবীর আহাদ বলেছেন, বিষয়টির ঐতিহাসিক গুরুত্বের আলোকে সর্বাগ্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া একান্ত প্রয়োজন । অন্যথায় এ-নির্দেশনা টেকসই হবে না ।

আজ এক বিবৃতিতে উপরোক্ত মন্তব্য করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবীর আহাদ বলেন, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুমহান নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বে, এক সর্বাত্মক রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে । কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, স্বাধীনতা অর্জনের পর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংবিধানের মূল স্তম্ভ 'প্রস্তাবনা'র কোথাও 'মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা' শব্দের কোনোই অস্তিত্ব নেই ! এর অর্থ আমাদের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হয়নি যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ।

আবীর আহাদ বলেন, আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে : আমরা বাংলাদেশের জনগণ--------'মুক্তি সংগ্রামের' মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি '------এখানে 'মুক্তিযুদ্ধে'র কথাটি স্বীকৃত হয়নি । অনুরূপ 'দেশের জনগণ ও শহীদদের প্রাণোৎসর্গের বিনিময়ে' কথাটি থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা স্বীকৃত হয়নি । সংবিধানে যখন মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা শব্দদ্বয় স্বীকৃত নয়, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হাজারো গুণকীর্তন করা হলেও সাংবিধানিক আইনের চোখে তা ধোপে টেকে না । আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে 'বীর' লেখার যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এটার কোনো সর্বজন শাশ্বত গ্রহণযোগ্যতা নেই । কেনো না, কোনো সময় যদি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়, তখন তারা এ-প্রশাসনিক আদেশ আরেকটি প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে প্রত্যাহার করে নিতে পারবে । এমনকি চলমান সময়েও সবাই এ-নির্দেশনা মানবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই । আইনি বাধ্যবাধকতাও নেই ।

আবীর আহাদ বলেন, অনেক বিদগ্ধজন বলে থাকেন যে, সংবিধানে 'মুক্তিসংগ্রাম' শব্দটি 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটির নামান্তর----একে অপরের পরিপূরক, একই অর্থ বহন করে । তাহলে তো বাংল ভাষার অভিধানে মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে পৃথক পৃথক প্রসঙ্গ বা শব্দ থাকতো না-----যে-কোনো একটি প্রসঙ্গ দিয়ে সব প্রসঙ্গকে চিহ্নিত করা যেতো ! অনুরূপভাবে ইংরেজী ভাষায়ও শব্দগুলোকে পৃথক পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেমন : Liberation Struggle, Liberation war বা War of Liberation, Independence War, independent Struggle. সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা শব্দদ্বয় না থাকার ফলে একদা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আলবদর নেতা মাওলানা আলী হোসেন মুজাহিদ সদম্ভ বলেছিলেন যে বাংলাদেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি; হয়েছিলো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ! সেই সূত্র অনেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে গণ্ডগোলের বছর, ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ ইত্যাদি বলে অবমূল্যায়ন করে থাকেন । অপরদিকে 'মুক্তিযোদ্ধা' সত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সুরক্ষা ও ভিত্তি না থাকার ফলে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও যখন তখন যে কোনো অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি রাজাকাররাও মুক্তিযোদ্ধা বনে গিয়েছে ! এ প্রক্রিয়ায় যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বমোট সংখ্যা দেড় লাখের নীচে, সেখানে তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দু 'লাখ পঁয়ত্রিশ হাজারের মতো । এখানে প্রায় পঁচাশি হাজারই ভুয়া । জানি না, সরকারের সর্বশেষ প্রকাশিতব্য মুক্তিযোদ্ধা তালিকার সংখ্যা কতোতে দাঁড়াবে । তবে আমাদের বদ্ধমূল ধারণা, যে প্রক্রিয়ায় তালিকা করা হচ্ছে তাতে হাজার হাজার ভুয়া থেকেই যাবে !

বিবৃতিতে আবীর আহাদ সংবিধানের পবিত্রতা ও ইতিহাসের স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকে সাংবিধানের যথাযথ স্থানে লিপিবদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, সংবিধানে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদান স্বীকৃত হলেই কেবল 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' নামের সার্থকতা মহিমান্বিত হয় । অন্যথায় এটা গাছের গোড়া কেটে আগায় জল ঢালার সামিল বলে পরিগণিত হবে !

একই বিবৃতিতে আবীর আহাদ মুক্তিযুদ্ধের পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে, আরো কিছুদিন সময় নিয়ে হলেও ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তর সালের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে বিষয়টি ফয়সালা করার জন্যে সরকারের প্রতি দাবি জানান এবং বিধিবহির্ভূত পন্থায় বিভিন্ন সময় যেসব অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছে, সেগুলোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে তাদের ও যারা তাদেরকে অর্থ আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে তাদের সবার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন ।

(এ/এসপি/মে ০৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test