E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজিমপুর গোরস্থান

মাসোহারা দিলে ‘অক্ষত’ থাকে স্বজনের কবর

২০২১ সেপ্টেম্বর ২৪ ১৬:৪০:১৭
মাসোহারা দিলে ‘অক্ষত’ থাকে স্বজনের কবর

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রেখা বেগম। তার মা পরী বেগম বছর দুয়েক আগে মারা যান। রাজধানীর আজিমপুরের পুরোনো কবরস্থানে পরী বেগমকে দাফন করা হয়। রেখা বেগম সময় পেলেই মায়ের কবর জিয়ারত করতে ছুটে আসেন।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে নিউমার্কেটের সামনের গেট দিয়ে প্রবেশ করে পূর্ব দিকে তাকিয়ে দেখেন যে সারিতে মায়ের কবর ছিল, সেখানে কবরের অস্তিত্ব নেই। শুধু তার মায়ের কবরই নয়, আশপাশের কয়েক সারি জুড়ে শুধুই মাটি। মাঝে মধ্যে দু’একটি কবর চোখে পড়ে। মন খারাপ করে মায়ের কবরটি যে স্থানে ছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে দোয়া-দরুদ পাঠ ও মোনাজাত করেন রেখা।

রেখা বেগম বলেন, ‘আজিমপুর কবরস্থানে দাফন-কাফনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, এখানে প্রতিদিন ২৫/৩০টি মরদেহ দাফন করা হয়। নতুন মরদেহ দাফনের আর জায়গা থাকে না। এ কারণে দুই থেকে আড়াই বছর পর পর পুরোনো কবরগুলো ভেঙে (তাদের ভাষায় কবর চালান দেওয়া) ফেলা হয়।’

তবে কবর ভেঙে ফেলা হলেও মায়ের অস্তিত্ব মনে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন রেখা বেগম।

শুধু রেখা নয়, শুক্রবার জুমার নামাজের দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই স্বজনের কবর জিয়ারত করতে এসে দেখেন কবরের অস্তিত্ব নেই। সারি সারি কবর ও সাইনবোর্ডের স্থলে মাটি, বাঁশ ও হাড়গোড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। সবারই মন খারাপ। তারা জানতে চান, কেন এমন করা হয়?

আজিমপুর কবরস্থানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি তাদের রুটিন কাজ। প্রতি দুই থেকে আড়াই বছর পর পর পুরোনো কবর খুঁড়ে তুলে সমান করে ফেলা হয়।’

তিনি বলেন, ‘রাজধানীর অন্যান্য কবরস্থানের চেয়ে আজিমপুর কবরস্থানে মরদেহ দাফনের সংখ্যা বেশি। এ কারণে মরদেহ দাফনের নতুন জায়গা তৈরি করতে কবর চালান (ভেঙে ফেরা) হয়।’

তবে নির্দিষ্ট কিছু কবর না ভাঙা প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেগুলো কেনা কবর (জমি কিনে নেওয়া), বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর অথবা অতি সম্প্রতি দাফন করা হয়েছে, এমন কবর ভাঙা হয়নি।’

আজিমপুর কবরস্থানে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, কিছু কিছু কবরের মেয়াদ (দুই আড়াই বছর পার) ফুরিয়ে গেলেও মাসোহারা নিয়ে কবর অক্ষত রেখে দেওয়া হয়। যারা মাসোহারা দেয় না, তাদের কবর ভেঙে ফেলা হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কবর জিয়ারত করতে আসা কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজিমপুর কবরস্থানের কিছু কিছু অংশে কবরের আশপাশ ঘন ঝোপঝাড় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।

তাদের অনেকের স্বজনের কবর ঝোপঝাড়ে ঢাকা পড়েছে। ঝোপঝাড়ে সাপও দেখা যায়। কবরস্থান দেখভালে জড়িতদের নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনার অনুরোধ তাদের।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test