E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাতির পিতার আদর্শে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে শিশুরা : প্রধানমন্ত্রী 

২০২৩ মার্চ ১৭ ১৮:১৩:৪৫
জাতির পিতার আদর্শে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে শিশুরা : প্রধানমন্ত্রী 

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। তারা এই দেশটাকে গড়ে তুলবে। শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ, তারাও যেন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে এটাই আমাদের লক্ষ্য। খেলাধুলা, শরীরচর্চা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, শিক্ষকদের-অভিভাবকদের কথা মান্য করা ও তাদের নিয়ম মেনে চলতে হবে প্রতিটি শিশুকে। সবাইকেই উন্নত মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হতে হবে।

আজ শুক্রবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘১০৩ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত জাতীয় শিশু দিবসের আলাচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধের পাবলিক প্লাজায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল। শিশুদের পক্ষে বক্তব্য দেন স্বপ্নিল বিশ্বাস। শিশু প্রতিনিধি স্নেহা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে শিশু রুবাবা তোহা জামান ও এ এল শরফুদ্দিন। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ খলিলুর রহমান ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা প্রতিবন্ধী বা অক্ষম তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। অন্ধকে অন্ধ বলিও না, পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না, এটা হচ্ছে ছোটবেলার শিক্ষা। কাজেই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। ত্যাগ ও মানুষের জন্য কিছু করা মহৎ একটা কাজ। জাতির পিতা বলেছিলেন মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে কোনো শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না। কোন মানুষই ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হবে না, প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করলে শরীর ভালো থাকবে, মন ভাল থাকবে। সবাই একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠবে। তাই খেলাধুলা শরীর চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠান মালার শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকার; শীর্ষক একটি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন এবং জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজমানচা’ ও জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর কুইজ-আবৃত্তি, সাহিত্য-সংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমানের লেখা ‘শিশুদের শেখ মুজিব’ শিরোনামের একটি সচিত্র বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাচিত সেরা চিত্রকর্মটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক হিসেবে উপহার দেওয়া হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ১০০ অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে আর্থিক অনুদান হিসেবে প্রত্যেকে ২৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধে ৩ দিন ব্যাপী বই মেলার উদ্বোধন করেন। পরে তিনি স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন।

এদিন সকাল সাড়ে ১০ টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকীতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথম রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ গোটা জাতির পক্ষ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি ১০৩ তম জম্ম বার্ষিকীর শ্রদ্ধা নিবেদেন করেন। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষন সমাধিসৌধের বেদীর পাশে নিরবে দাড়িয়ে থাকেন। তারপর পবিত্র সুরা ফাতেহা পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধু ও ৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লাখ শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করেন তাঁরা। পরে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সমাধি সৌধে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন।

এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দোয়া মোনাজাত করেন।

এরপর রাষ্ট্রপতির পত্নী রাশিদা খানম, ছেলে রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক এমপি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে জন্ম দিনের শ্রদ্ধা জানান। পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধা নিবেদর পর গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারপর আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমজিবি, পেশাজিবি সংগঠন, শিক্ষা সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী সড়ক পথে ৭ম বারের মতো পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া আসেন। পরে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ টুঙ্গিপাড়া পৌছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। বিকাল ৪ টা ১৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন।

রঙিন সাজে টুঙ্গিপাড়া

বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিনে রংবেরং এর পতাকা, ব্যানার, ফেষ্টুন ও তোরন দিয়ে টুঙ্গিপাড়াকে বর্নিল সাজে সাজানো হয়। সর্বত্রই বিরাজ করছিল উৎসবের আমেজ ও সাজসাজ রব। নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা। শিশু সমাবেশের শুরুতে শুভ শুভ শুভ দিন বঙ্গবন্ধুর জম্ম দিন ধ্বনিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের জম্ম ভূমি টুঙ্গিপাড়া মুখরিত হয়ে ওঠে। শিশু কিশোর সমাবেশে গোপালগঞ্জের শিশুদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে।

প্রার্থনা সভা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবর্ষিকী উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার প্রধান প্রধান মসজিদ, মন্দির ও গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গোপালগঞ্জ কেন্দ্রীয় সার্বজনীন কালিবাড়ীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জম্ম বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রর্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সেখানে বঙ্গবন্ধুর আতœার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা, শাস্ত্রপাঠ ও ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরন করা হয়।

এদিকে শহরের শেখ রাসেল শিশু পার্ক সংলগ্ন লোকনাথ মন্দিরে বঙ্গবন্ধুর জম্ম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রর্থনা সভা, বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও প্রসাদ বিতরনের আয়োজন করা হয় বলে মন্দিরের পূজারী খোকন কর্মকার জানিয়েছেন।

(টিবি/এসপি/মার্চ ১৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test