E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইভিএম নিয়ে সংশয় প্রার্থীদের, আশ্বস্ত করলেন নির্বাচন কমিশনার

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ২৮ ১৬:০০:০৪
ইভিএম নিয়ে সংশয় প্রার্থীদের, আশ্বস্ত করলেন নির্বাচন কমিশনার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : ৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। এ সময় নিরপেক্ষ ভোটের নিশ্চয়তা দিয়ে প্রার্থীদের আশ্বস্ত করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরের তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে মসিক নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আশ্বাস দেন।

এর আগে মসিক নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন চৌধুরী। এরপর বক্তব্য রাখেন মেয়র পদের প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ প্রার্থী।

এ সময় মসিকের সদ্য সাবেক মেয়র ও দেয়াল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, ইভিএমে ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা ও অজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ১২টি ওয়ার্ডের ভোটারদের মধ্যে এ অজ্ঞতা অনেক বেশি। সেই সঙ্গে ইভিএমে পছন্দের প্রার্থীর প্রতীক থাকবে কি না, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।

তিনি বলেন, মূলত একটি গোষ্ঠী এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া মোবাইল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া যাবে কি না, বিষয়টি স্পষ্ট করা জরুরি। ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে ইভিএম বিষয়ে ভোটারদের স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া অতি জরুরি বলেও আমি মনে করি।

হাতি প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাদেকুল হক খান মিল্কি টজু বলেন, বিগত নির্বাচনে অনেক প্রার্থী হেরে যাওয়ার পেছনে ইভিএমকে দায়ী করেছিলেন এবং ইভিএমের ধীরগতি নিয়েও কথা রয়েছে। একই সঙ্গে ইভিএমের ভোট নিয়ে ভোটারদের শঙ্কা অনেক। এ অবস্থায় ব্যালটে ভোট করলে ভোটাররা স্বস্তি বোধ করতেন বলে আমি মনে করি।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঘোঢ়া প্রতীকের প্রার্থী এহতেশামুল আলম বলেন, ইভিএম সম্পর্কে ভোটারদের মধ্যে ভালো ধারণা আছে, তা বলা যাবে না। ব্যালটে ভোট হলে প্রার্থী ও ভোটাররা স্বস্তি বোধ করতেন। আচরণবিধি নিয়েও কমিশনের কঠোর নজরদারি জরুরি।

জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল বলেন, ইভিএমে সাধারণ মানুষের ভোট দিতে অনীহা রয়েছে। তারা বলে- ইভিএমে এক মার্কায় ভোট দিলে আরেক মার্কায় চলে যায়। এ জন্য প্রচারণার মাধ্যমে ভোটারদের আশ্বস্ত করা দরকার। এসব বিষয় খেয়াল রেখে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কাজ করবেন বলে আমি আশা করছি।

হরিণ প্রতীকের প্রার্থী কৃষিবিদ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ইভিএম একটি আধুনিক প্রযুক্তি। এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা থাকা দরকার। সেই সঙ্গে প্রার্থীদের প্রচার ও প্রচারণায় করতে গিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন যেন না হয়, সে বিষয়েও কঠোর নজরদারি থাকা দরকার। এ ছাড়া প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় সীমা যেন লঙ্ঘন না হয়, সেদিকেও নজরদারি করতে হবে।

ইভিএম নিয়ে প্রার্থীদের শঙ্কা-সংশয় উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ইভিএমে অনিয়ম একেবারেই অসম্ভব, এটি বিজ্ঞানের বিষয়। এতে একজনের ভোট আরেকজনের প্রতীকে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি তাই হতো, তাহলে বিগত নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টিসহ অন্য প্রার্থীরা বিজয়ী হতেন না।

তিনি আরও বলেন, ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হয়, তা ভোটারদের জানাতে জেলা প্রশাসন ও তথ্য অফিসের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। এমনকি নির্বাচনের দিন ভোটারদের লাইনেও বিষয়টি নিয়ে ধারণা দেওয়া হবে। এর আগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা এবং ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এতে কোথাও সমস্যা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে আঙুলের ছাপে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকে, সেজন্য সঠিক ভোটার নিশ্চিত হলে ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। মোট কথা ইভিএম নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, বরং ভোটার উপস্থিতিই আসল বিষয়।

এ সময় ইসি মো. আলমগীর প্রার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত প্রসঙ্গে বলেন, কোনো প্রার্থীর প্রতি অসম্মান দেখানোর সুযোগ নেই। আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান সম্মানিত। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তিনিই নির্বাচিত হবেন। এক্ষেত্রে কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা নিরপেক্ষ না হলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করুন। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এর আগে আপনারা দেখেছেন জেলা প্রশাসক, নির্বাচন কর্মকর্তা ও ওসিসহ অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে বাদ যায়নি প্রার্থীরাও। বিগত জাতীয় নির্বাচনে একজন প্রার্থির প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। মোট কথা এ নির্বাচন হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এতে জাল ভোট বা অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।

মতবিনিময় সভায় বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রায়হানুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এর আগে সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসি মো. আলমগীর। এতে সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচনের অ্যানালগ পদ্ধতি বাতিল করে প্রচার-প্রচারণা ও প্রার্থীদের নমিনেশন পেপার সাবমিটসহ নির্বাচনের সব কার্যক্রম ডিজিটাল করতে আইন প্রনয়ণ করা হবে। সেই সঙ্গে সিটি নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সরকারি কোনো কর্মকর্তা নির্বাচনী প্রচার কাজে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মসিক নির্বাচনে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৩২ পুরুষ, এক লাখ ৭২ হাজার ৬৫৫ নারী। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯ জন। তারা আগামী ৯ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নগরের ১২৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন।

এতে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৬৯ জন। তবে নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় কাউন্সিলর পদে ৩২টি ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test