E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সরকার বিরোধী অপতথ্য ছড়াচ্ছেন ড. ইউনুস

২০২৪ মার্চ ০২ ১৭:৫৪:২৯
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সরকার বিরোধী অপতথ্য ছড়াচ্ছেন ড. ইউনুস

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বন্ধুদের কাছ থেকে বিবৃতি আনা, সেই বিবৃতি মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিজ্ঞাপন আকারে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এবার তিনি সংবাদ প্রচারেরও উদ্যোগ নিয়েছেন। এবারে সম্প্রতি পিবিএস নিউজ আওয়ার এ প্রচারিত সংবাদে তিনি সরকারের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’- এমন অভিযোগ করে বিচার বিভাগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। প্রতিবেদনে সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলা হলেও তাদের কোন বক্তব্য নেওয়া হয়নি।

প্রচারিত সংবাদে ড. ইউনুসের ইতিবাচক ইমেজ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, আইনি প্রক্রিয়া ও তার কর্মীদের প্রতি যে অবহেলা তা নিয়ে কোন তথ্য সেখানে উল্লেখ করা হয়নি। বরং প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষক আলী রিয়াজ এর মন্তব্যের মাধ্যমে বিচারবিভাগ ও সরকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এমনকি প্রতিবেদনে ড. ইউনুস এই পরিস্থিতিতে দেশত্যাগ করতে চান কিনা সে নিয়েও আলাপ তোলা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তার প্রতি বিদ্বেষের বিষয়টি বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হবে।

এর আগে ইউনুসের প্রতি ন্যয়বিচার করা হচ্ছে কিনা প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তি। সেটি আবার মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হলে সেটি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে উঠে আসে। তারা সরকারকে ন্যায্য ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।অথচ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো কোনভাবে ‘ইগনোর করার’ সুযোগ আছে কিনা তারা যৌক্তিকভাবে সেটা খুঁজে দেখার চেষ্টা করেননি।

ড. ইউনুস কী চান

২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরপরই ড. ইউনূস বাংলাদেশে মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছিলেন। প্রথমে রাজনৈতিক দল করে তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু জনগণের ভোটে জেতা তার পক্ষে অসম্ভব বুঝতে পেরে তিনি পিছিয়ে যান। অনেকেই মনে করেন, এক-এগারোর মাস্টারপ্ল্যান ড. ইউনূসেরমস্তিষ্কপ্রসূত। মঈন ইউ আহমেদের আত্মজীবনীমূলক ‘শান্তি স্বপ্নে, সময়ের স্মৃতিচারণ’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি (মঈন) ড. ইউনূসকে ফোন করলে এই অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশকে তিনি যেমন দেখতে চান সেরকম বাংলাদেশ গড়তে খণ্ডকালীন সময় যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশকে তিনি আরও দীর্ঘ সময় ধরে সেবা দিতে চান।’ তিনি নিজে অনির্বাচিত সরকার প্রধান না হয়ে ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে এ দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন।

তারপর থেকে তিনি বিদেশে তার গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে অপতথ্যছড়ানোর কাজটি ধারাবাহিকভাবে করেছেন। একদিকে ক্লিনটন পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, আরেকদিকে জাতিসংঘে নোবেলজয়ীর মর্যাদা ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার। এরপরই পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের সঙ্গে ড. ইউনূসের নাম জড়িত হলে বিষয়গুলো প্রকাশ্য হতে শুরু করে। যদিও ড. ইউনূস তা অস্বীকার করেন।

কেনো এসব করার দরকার হলো

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পত্রিকা সম্পাদনা, স্কাউট, অভিনয়, কলাম লেখা, শিক্ষকতা, ব্যবসা, ব্যাংকার হিসেবে তার অবদান ও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ যাবৎ পুরস্কারও পেয়েছেন ১৪৫টির বেশি। সবচেয়ে বড় পুরস্কার ‘নোবেল’। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্মান, অর্থ, খ্যাতি, পুরস্কার- এসবই পেয়েছেন, শুধু রাজনীতিতে সফলতা এখনো অধরা। এ অপূর্ণতাঘুচতে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্রান্তিলগ্নে ও দুঃসময়ে বারবার উঁকি দিতে চেষ্টা করেছেন ঠিকই কিন্তু ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এবং রাজনীতি করতে মাঠের যে সম্পৃক্ততা প্রয়োজন সেটি তার নেই।

ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা ও বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সরকারের সম্পৃক্ততা নিয়ে যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ না করে কেবল তার কথায় বন্ধুত্বসুলভ জায়গা থেকে যা করা হচ্ছে তার সমালোচনা করে আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইনডেমনিটি দিতে যে চিঠি প্রচারিত হয়েছে, এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগে আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে মাননীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নোবেল বিজয়ীরা কি তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও চলমান মামলা স্থগিতের জন্য ওই সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে অনুরোধ করে বিবৃতি দেবেন?

সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মো মুজিবুর রহমান লিখেছেন, সংশ্লিষ্টদের এবং সরকারের উচিত হবে প্রতিটি বিবৃতিদাতা সম্মানিত ব্যক্তিদের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি ও তার বিরুদ্ধে চলমান মামলার সব কাগজপত্র প্রেরণ করে তাদের প্রকৃত ঘটনা জানতে দেয়া এবং তাদের কাছ থেকে অভিমত নেয়া যে, কর ফাঁকি বা শ্রমিকের পাওনা মেটাতে অস্বীকার যিনি করেন তাকে অভিযুক্ত না করা তাদের আইনে আছে কি না?

বারবার আন্তর্জাতিক ঢাল

এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ব্যবহারের চেষ্টা হলো তা নয়। যতবারই ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে কোন আইনি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ততবারই তিনি নানাভাবে আন্তর্জাতিক মহলকে সক্রিয় করতে চেষ্টা করেছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চিঠি, তারও ৪০ জন বৈশ্বিক নেতাকে দিয়ে বিবৃতি উল্লেখযোগ্য।

বন্ধু বিপদে পড়লে বন্ধু স্থানীয় যে কেউ বিবৃতি দিয়ে থাকে উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ বলেন, নিজেকে বাঁচাতে ড. ইউনুস বাংলাদেশকে যেভাবে উপস্থাপন করছেন সেটা খুব গ্রহণযোগ্য নয়। তার বিরুদ্ধে মামলা যেটা হয়েছে সেটা তিনি আইনিভাবেই প্রতিকার পেতে পারেন। টাকা দিয়ে বিবৃতি দেওয়ার মতো কাজগুলো করে তিনি নিজেকে আরও বিতর্কিত করে তুলছেন।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test