E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ বিভীষিকাময় ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস

২০২৪ মার্চ ২৫ ১৩:১০:২৮
আজ বিভীষিকাময় ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস

স্টাফ রিপোর্টার : বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি ভয়াল বিভীষিকাময় দিন ২৫ মার্চ। ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞ চালায়।

১৯৭১ সালের এই দিন রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের বর্বর হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্য শুরু করে। বাঙালি এই দিনটিকে জাতীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্মরণ করে আসছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ ও পথ পরিক্রমার এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালের মার্চের দিনগুলিতে আন্দোলনের অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মার্চের প্রতিটি দিনের ঘটনাবলি বাঙালির অধিকার আদায়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামকে সশন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকে বাধিত করে। এই মাসে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ২৫ মার্চ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ২৪তম দিন। সেদিন সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। মধ্য রাতের আগে থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক, অত্যাধুনিক অস্ত্রসন্ত্র নিয়ে ‘আপারেশন সার্চ লাইট’ এর নামে ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপরে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানা শুরু করে। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বৈঠকের মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করে নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এই পরিস্থতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ২ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তুলে ধরেন এবং ১৫ মার্চ থেকে ৩৫ দফা নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশ সারা বাংলায় অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়।

আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে বাঙালির ওপর সশস্ত্র আক্রমণের নির্দেশ দিয়ে যায়। ওই দিন দিবাগত রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশে গণহত্যা শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা এবং রাজারবাগে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, বাঙালি পুলিশ ও সামরিক সদস্যদের হত্যা করতে থাকে। নিরীহ মানুষকে হত্যা, আগুন দিয়ে বাড়ি ঘর, জ্বালিয়ে দেওয়া শুরু করে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পোড়া মাটি নীতি গ্রহণ করে ‘মাটি চাই, মানুষ চাই না’ এই নির্দেশ বাস্তবায়ন শুরু করে তাদের সামরিক বাহিনী। বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত। বাঙালির জীবনের ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতার স্মৃতি হিসেবে চিহ্নিত এই রাত।

এদিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যাকাণ্ড শুরু করলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা সঙ্গে সঙ্গে প্রচার হতে থাকে এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ।

এই কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যার ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি এই ২৫ মার্চ গণহত্যাকে বাঙালি জাতি বহুদিন ধরে আন্তর্জাতিক গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি করে আসছে। বাঙালির দাবিটি ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে।

(ওএস/এএস/মার্চ ২৫, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test