E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর, দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু

২০২৪ এপ্রিল ২৩ ১৩:১৯:২৯
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর, দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে দোষীদের শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের দাবিতে ‘রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর : হাজারো প্রাণ ও স্বপ্নের গল্প’ নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সাভারে রানা প্লাজার সামনে সকাল ৯টায় দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন হয় এই আলোকচিত্র প্রদশর্নীর মধ্য দিয়ে।

প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত শ্রমিক জেসমিন। জেসমিন রানা প্লাজা ভবনের ধ্বংসস্তূপে দুই দিন আটকে থাকার পর উদ্ধার হয়েছিলেন।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আহত জেসমিন, নিহত শ্রমিক আঁখি আক্তারের মা নাসিমা আক্তার, নিহত ফজলে রাব্বীর মা রাহেলা আক্তার, নিহত শাহীদার মা তাহেরা বেগম এবং গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, গার্মেন্ট ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার শাখার সহ-ভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন।

প্রদর্শনীতে মোট ৪ জন আলোকচিত্রীর কাজ এবং পোশাকশ্রমিকদের সন্তানদের মধ্যে ৭ জন আঁকিয়ের চিত্রকর্ম এবং জীবিত থাকা অবস্থায় স্টুডিওতে ২০ জন শ্রমিকের তোলা ছবি স্থান পেয়েছে। আলোকচিত্রীদের মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, আলোকচিত্রী এন্ড্রু বিরাজ, রাহুল তালুকদার ও শুভ্রকান্তি দাসের ছবি প্রদর্শিত হয়।

এছাড়া নিহত ও আহত পরিবারের কাছ থেকে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সংগৃহীত ছবি স্থান পায়। বেশির ভাগ সংগৃহীত ছবি শ্রমিকরা স্টুডিওতে গিয়ে বা শখ করে তুলেছিলেন। ৪ জন আলোকচিত্রীর ছবি এবং শ্রমিকের সন্তানদের আঁকা ছবি যেমন নির্মম সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে, তেমনি শ্রমিকদের নিজেদের স্টুডিওতে গিয়ে তোলা ছবি যেন তাদের স্বপ্নর কথা বলে। নিহত শাহেদুল তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে স্টুডিওতে ছবি তোলেন, ব্যাকড্রপে উড়োজাহাজ। হয়তো শাহিদুলের স্বপ্ন ছিলে দেশের বাইরে যাওয়ার!

নিহত আঁখি আক্তার (১৮) সমুদ্র ভালোবাসতেন। কিন্তু যাওয়া হয়নি কখনো। তাই স্টুডিও থেকে স্বপ্নের ছবি তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন। আঁখি আক্তার ও তার বন্ধুরা রানা প্লাজার সপ্তম তলার নিউ ওয়েব স্টাইল লিমিটেড কারখনায় কাজ করতেন। বন্ধুদের সঙ্গে পহেলা বৈশাখে, ২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিল ছবিটি তোলেন। ঠিক ১০ দিন পর ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পর থেকে আঁখি নিখোঁজ। জানা যায়, এই ছবির কেবল একজন বেঁচে আছেন, আঁখিসহ এই ছবির বাকি সকাই নিহত বা নিখোঁজ।

২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে এসব শ্রমিকের প্রাণ ও স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে গেছে। প্রদর্শনীটি রানা প্লাজার সামনে করে আবারও সেই অতীতের স্মৃতিকে সামনে আনা হয়েছে। এই ঘটনাকে ইতিহাসে বাঁচিয়ে রাখতে এবং তরুণদের লড়াইয়ে প্রেরণা দিতেই এই প্রদর্শনী। রানা প্লাজার শ্রমিকদের মতো যাতে আর কারো অকালে মরতে না হয়, সে জন্য ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে দিয়েছেন আয়োজকরা।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে আলোচনায় আহত শ্রমিক জেসমিন বলেন, এমনভাবে দুই দিন আটকা ছিলাম, বাঁচার কোনো আশা ছিলে না। একজন অচেনা মানুষ আমাকে আগলে রেখে বাঁচিয়েছিলেন। তখন কে পুরুষ, কে নারী, কে হিন্দু, কে মুসলমান ভাবার সুযোগ ছিলে না। বাঁচার চরম ইচ্ছা এবং সন্তানকে দেখার ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছু মাথায় আসেনি।

জেসমিন আরও বলেন, ১১ বছর ধরে সেই দুঃসহ স্মৃতির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি মনে এবং শরীরে। অথচ এখনো দোষীদের শাস্তি হয়নি। দোষীদের শাস্তি হলে আমরা প্রাণে একটু শান্তি পেতাম!

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, ১১ বছরেও ১১৭৫ জন প্রাণ হত্যার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়নি। কারখানার ভবন মালিক সোহেল রানা ছাড়া অন্যান্য মালিক, সরকারি কর্মকর্তারা জামিনে জেলের বাইরে আছেন। সোহেল রানাও গত বছর জামিন পায়। পরবর্তীতে তার জামিন উচ্চ আদালত স্থগিত করে।

বিচারের এই ধীরগতি সরকার ও রাষ্ট্রের মালিকপক্ষ ও দোষীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের এবং তাদের বাঁচিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টারই সামিল বলে অভিহিত করেন অন্যান্য বক্তারা।

তারা বলেন, যে রাষ্ট্রে কোনো গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ নেই, জনগণের মতপ্রকাশের সুযোগ নেই, সেখানে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা আরেও বিপর্যস্ত হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।

বক্তারা বলেন, নিহত ও আহতদের পরিবারকে ১১ বছর আগে যে আইনি ক্ষতিপূরণ বা অনুদান দেওয়া হয়েছে, তা কখনোই সম্মানজনক বা মর্যাদাপূর্ণ নয়। শ্রম আইনে ক্ষতিপূরণের আইন যা বদল হয়েছে, তা অতি নগণ্য। এক লাখ এবং দেড় লাখ থেকে দুই লাখ ও আড়াই লাখ পর্যন্ত বাড়ানো কোনো শ্রমিককে মানুষ হিসেবে গণ্য না করারই উদাহরণ।

তারা বলেন, ক্ষতিপূরণ কোনো ভিক্ষা নয়, এটি শ্রমিক ও নাগরিকের আইনি অধিকার। এই অধিকার রক্ষায় এক হওয়ার আহবান জানান তারা।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী কর্মসূচিতে রানা প্লাজার সামনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও প্রতিবাদী র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে ২৪ এপ্রিল।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ২৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test