E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লাঙ্গলবন্দ স্নানঘাট সংরক্ষণে সরকারের প্রতি আহ্বান

২০১৫ মার্চ ৩০ ১৭:৫১:৪২
লাঙ্গলবন্দ স্নানঘাট সংরক্ষণে সরকারের প্রতি আহ্বান

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় লাঙ্গলবন্দ স্নানঘাট সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের নেতারা। পুণ্যস্নানে গিয়ে পদদলিত হয়ে সাত নারীসহ ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আজ সোমবার তাঁরা এ আহ্বান জানান।

পরিদর্শন শেষে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে লেখক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুণ্যস্নানে এসে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, আমরা আশা করব, তারা সরকারি প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবেন। আগামীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবেন।’

সৈয়দ আবুল মকসুদ আরও বলেন, লাঙ্গলবন্দে প্রতি বছর পুণ্যস্নান করতে ১০-১৫ লাখ মানুষ আসেন। দেশ-বিদেশের এসব পুণ্যার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি, টয়লেট, কাপড় বদলানোর স্থান, বিশ্রামের ব্যবস্থা নেই। লাঙ্গলবন্দের দেবোত্তর সম্পত্তিগুলো প্রভাবশালী দখলদারেরা জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে। নদী ভরাট হয়ে পানি কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে থাকে, যা পুণ্যার্থীদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ। লাঙ্গলবন্দের স্নানঘাটের পার্শ্ববর্তী রাস্তা সরু হওয়ায় পুণ্যার্থীদের ভিড়ের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। আগামী বছর থেকে পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, তা নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি পুণ্যস্নান উৎসবের আয়োজক, জেলা-পুলিশ প্রশাসন, স্নান উদ্‌যাপন কমিটির সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, তা ঠিক করা উচিত। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে লাশ বহন ও সৎকার বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দিয়েছে প্রশাসন। নিহত ব্যক্তিরা তাঁদের পরিবারের উপার্জনের উৎস ছিলেন, তাই সরকারের উচিত নিহত ১০ জনের প্রত্যেক পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ পুরো উপমহাদেশের মধ্যে লাঙ্গলবন্দ অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। এবারের অষ্টমী স্নানের দিন কারা বেইলি ব্রিজ ভাঙার গুজব ছড়িয়েছিল, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ৪৭ একর দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হতে হতে এখন মাত্র সোয়া দুই একর রয়েছে। কারা এই সমস্ত দেবোত্তর সম্পত্তি জাল কাগজপত্র তৈরি করে বেদখল করেছে, তাদেরও চিহ্নিত করে এই সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে হবে। লাঙ্গলবন্দ এখন শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান নয়, এটিকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সংরক্ষণ করার দাবি জানান তিনি। ব্রহ্মপুত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কারের জন্য সরকার প্রয়োজনে নাগরিকদের স্বেচ্ছা শ্রমের আহ্বান জানাতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে নাগরিক সমাজের নেতাদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার, হাসান আহমেদ, সুবোধ এম বাস্কে, নারী নেত্রী জয়ন্তী রায় ও শায়লা আহমেদ লোপা। পরে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দলটি নগর ভবনে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদ্‌যাপন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি শংকর কুমার সাহা প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে দেখা করেন।

২৭ মার্চ লাঙ্গলবন্দে অষ্টমী স্নান চলাকালে পদদলিত হয়ে সাত নারীসহ ১০ পুণ্যার্থী নিহত হন। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

(ওএস/এএস/মার্চ ৩০, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test