E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিরবে চলে গেল কমল দাশ গুপ্ত'র ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী

২০১৫ জুলাই ২৯ ২১:২০:২১
নিরবে চলে গেল কমল দাশ গুপ্ত'র ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী

রূপক মুখার্জি,লোহাগড়া (নড়াইল)প্রতিনিধি:উপমহাদেশে সংগীতের ইতিহাসে কমল দাশ গুপ্ত একটি স্মরণীয়-বরণীয় নাম। বরেণ্য শিল্পী,সুরকার ও সংগীত পরিচালক কমল দাশ গুপ্ত ১৯১২ সালে ২৮ জুলাই তৎকালীন নড়াইল মহকুমার অধীন কালিয়ার পৌর এলাকার বেন্দা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। কমল দাশ  গুপ্তের পিতার নাম তারা প্রসন্ন দাশগুপ্ত। তিনি আইনজীবী পেশায় নিযুক্ত ছিলেন।

সৃজনশীলতা,স্বীয় মেধা-মনন আর কঠোর সাধনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সংগীতকে আত্মস্থ করেছিলেন। তিনি একমাত্র শিল্পী,যিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ নামক গ্রামোফোন কোম্পানীর সংগীত পরিচালক ও সুরকার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। বাংলা সংগীতের ইতিহাসে এমন ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই। অথচ,বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী এই বরেণ্য শিল্পীকে।

কালিয়া শহরের উপকন্ঠে নবগঙ্গা নদীর ভাঙ্গনে বহু বছর আগেই কমল দাশ গুপ্তের পৈত্রিক বাড়িটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কমল দাশ গুপ্তের কোন স্মৃতি চিহৃ নেই আজকের কালিয়ার বেন্দা গ্রামে।

কমল দাশ গুপ্ত ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি সংগীত চর্চার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। শৈশবকালে তিনি তাঁর বড় ভাই অধ্যাপক বিমল দাশ গুপ্তের কাছে ‘খেয়াল’ গান দিয়ে সংগীত জীবনের সূচনা করেন। এরপর তিনি প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ডি এল রায়ের ছেলে দিলীপ রায়,কৃষ্ণচন্দ্র দে এবং ওস্তাদ জমির উদ্দিন খাঁর নিকট ‘রাগ-রাগিনী’ বিষয়ক গান বাজনার তালিম নেন। এ সময় তিনি খেয়াল,ঠুমরী,দাদরা,ও গজল গান রপ্ত করেন।

প্রখর বুদ্ধি দীপ্ত কমল দাশ গুপ্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একান্ত সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম রচিত বহু গানের সুর স্রস্টা ছিলেন কমল দাশ গুপ্ত। ১৯৩৪ সাল থেকে শুরু করে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত তিনি তিনি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে সুর ও সংগীতের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা গ্রহণ করেন। এসময় তিনি একজন পেশাদার নজরুল সংগীত শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নজরুল সংগীত অঙ্গনে তিনি ‘মাস্টার কমল’ নামে পরিচিত ছিলেন। দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রায় ৩ শত নজরুল গীতির সুর দিয়েছেন কমল দাশ গুপ্ত।

বাংলাদেশের তথা উপমহাদেশের নজরুল সংগীতের প্রবাদ প্রতিম শিল্পী ফিরোজা বেগমের সাথে কমল দাশ গুপ্তের সখ্যতা গড়ে ওঠে এবং ১৯৫৫ সালে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে ফিরোজা বেগমকে বিয়ে করেন। তাহসিন,হামিন ও শাফিন আহম্মেদ নামে তাঁর তিন পুত্র সন্তান রয়েছে। হামিন ও শাফিন বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘মাইলস’র কর্ণধার।

কমল দাশ গুপ্ত বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। বাংলা গানের পাশাপাশি তিনি হিন্দি ও উর্দু গজল,ভজন,উচ্চাঙ্গ সংগীত,হামদ ও নাথ পরিবেশন করে দর্শক শ্রোতার মন জয় করেন। সংগীত পরিচালক হিসেবেও কমল দাশ গুপ্তের সুনাম রয়েছে। প্রায় ৮০ টি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি। তিনি প্রায় ১০ হাজার গানের সুর দিয়েছেন।

১৯৫৮ সালে তাঁর সুরারোপিত গানের সংখ্যা ৭ হাজার অতিক্রম করায় বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানী এইচএমভি কমল দাশ গুপ্তের গানের সিলভার জুবিলী উৎসব পালন করে-যা উপমহাদেশের সংগীতের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

প্রচার বিমুখ শিল্পী ও সুরকার কমল দাশ গুপ্ত ১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
অথচ,এ প্রজন্ম ভুলতে বসেছে বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী এই বরেণ্য শিল্পীকে। কালিয়া শহরের উপকন্ঠে নবগঙ্গা নদীর ভাঙ্গনে বহু বছর আগেই কমল দাশ গুপ্তের পৈত্রিক বাড়িটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কমল দাশ গুপ্তের কোন স্মৃতিচিহ্ন নেই আজকের কালিয়ার বেন্দা গ্রামে।

নড়াইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি মির্জা নজরুল ইসলাম কমল দাশ গুপ্ত সম্পর্কে বলেন,‘বরেণ্য এই শিল্পী ও সুরকারের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা উচিত। তাঁকে স্মরণ করা হলে জেলার তথা দেশের সাংস্কৃতি সমৃদ্ধি হবে’।

নড়াইলে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষক নাজমুল হাসান লিজা বলেন,কমল দাশ গুপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান,তাঁর জন্ম নড়াইলে হওয়ায় আমরা ধন্য। প্রতিবছর তার জন্ম ও মৃত্যুর দিন নড়াইল বাসীর পালন করা কর্তব্য। তাঁর নামে নড়াইলে একটি সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আমি বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

কালিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি শাহিদুল ইসলাম শাহি বলেন, গুনী এই শিল্পী ও সুরকারের জন্মভিটা নবগঙ্গা নদীর গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমান প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে কোন কিছুই জানে না। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী নড়াইলবাসীর পালন করা উচিত। দৈনিক যায়যায়দিনের লোহাগড়া প্রতিনিধি সাংবাদিক রূপক মুখার্জি বলেন, তাঁর ( কমল দাশ গুপ্ত) মতো বরেণ্য শিল্পীর কর্মময় জীবন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রজন্মকে এই গুনী শিল্পী ও সুরকার সম্পর্কে অবহিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।


(আরএম/এসসি/জুলাই ৩০,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test