E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মার্কিন বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করলেন শেখ হাসিনা

২০১৫ সেপ্টেম্বর ২৬ ১৩:৫৭:১৯
মার্কিন বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করলেন শেখ হাসিনা

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক :   বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য অনুকূল। গতকাল শুক্রবার নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা এ দেশের প্রথমসারির বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক করপোরেশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের জন্য মার্কিন ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকের ব্যাপারে বাংলাদেশের একজন সরকারি কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, এই প্রথম এত বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধান সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ পেলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগকৃত মূলধন থেকে মুনাফা দেশের বাইরে পাঠানোর কোনো কড়াকড়ি নেই, এই ব্যাপারে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানান।

মুখপাত্রটি জানান, কোনো কোনো ব্যাপারে তাঁরা এখনো যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁরা বিশেষভাবে শুল্কসংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি তুলে ধরেন। সরকারি পর্যায়ে এখনো লাল ফিতার দৌরাত্ম্য আছে, সে বিষয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এই বৈঠকে যেসব মার্কিন ও বহুজাতিক কোম্পানির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন তাদের মধ্যে ছিল স্কাই পাওয়ার গ্লোবাল, আমেরিকান টাওয়ার করপোরেশন, ফেডেক্স এক্সপ্রেস, মাস্টারকার্ড ইন্টারন্যাশনাল, ওয়ালমার্ট, বোয়িং কোম্পানি, শেভরন ও কোকাকোলা।

বাংলাদেশিদের পক্ষে এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট, বাংলাদেশের ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক আস্থাবান।
গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক আহুত 'টেকসই উন্নয়ন শীর্ষ বৈঠকে' অংশ নেন। ১৬০টির অধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এই শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা সর্বসম্মতিক্রমে পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য একটি টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা গ্রহণ করেন। এই এজেন্ডায় মোট ১৭টি উন্নয়ন লক্ষ্য ও ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর লক্ষ্য সমূহের অন্যতম হলো ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ক্ষুধার অবসান। মানসম্পন্ন শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার নিশ্চিতকরণও এই কর্মসূচির অন্তর্গত।

গতকাল বিকেলে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ওয়ার্ল্ড লিডারশিপ ফোরাম'-এ অতিথি বক্তা হিসেবে এক অনুষ্ঠানে 'মেয়েরাই পথ দেখাবে' শীর্ষক এক ভাষণে শেখ হাসিনা 'টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি' গ্রহণে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরেন এবং নতুন উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তাঁর সরকারের দৃঢ়তা পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে বাংলাদেশে নারী শিক্ষা উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর সরকার যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। স্মিত হাস্যের সঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী দলের প্রধান চারটি পদে নেতৃত্ব দিচ্ছে নারীরা। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এমন উদাহরণ নেই। বাংলাদেশে মেয়েরা যে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছে তার একটি কারণ সম্ভবত এই নারী নেতৃত্ব, শেখ হাসিনা জানান।

বাংলাদেশে মেয়েদের নিরাপত্তা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ, সে প্রশ্ন তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী এ বছর পয়লা বৈশাখে ঢাকায় মেয়েদের ওপর হামলার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নববর্ষে ঢাকায় ও দেশের অন্যত্র অসংখ্য অনুষ্ঠান হয়। তার মধ্যে মেয়েদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে একটি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।

মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিবাহের যে আইনগত বয়স ধরা হয়, তার সমীক্ষার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ‘উন্নত দেশে যে সিদ্ধান্ত রয়েছে, আমাদের সিদ্ধান্ত তা থেকে ভিন্ন হবে না’ বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, শুধু আইন নয়, শিক্ষা ও কর্মের সুযোগ বৃদ্ধি পেলেই মেয়েদের বিয়ের বয়স নিজ থেকেই বাড়বে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের ছাড়াও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ জন বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বিপুল করতালি দিয়ে সাদর সম্ভাষণ জানান। একজন ভারতীয় বাঙালি শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীকে “মাসি” বলে সম্বোধন করলে তিনি সহাস্যে তাঁর প্রশ্নের জবাব দেন। অনুষ্ঠান শেষে বাঙালি শিক্ষার্থীরা তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার অনুরোধ করলে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জানান। নিরাপত্তাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে উদ্যত হলে প্রধানমন্ত্রী “ঠিক আছে, ওদের আসতে দাও” বলে তাদের বিরত করেন।

(ওএস/এসসি/সেপ্টেম্বর২৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test