E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাঘ বাঁচাতে হলে, বাঁচাতে হবে সুন্দরবন

২০১৫ অক্টোবর ১০ ১৮:১০:৫৭
বাঘ বাঁচাতে হলে, বাঁচাতে হবে সুন্দরবন

বাগেরহাট প্রতিনিধি : চলতি অর্থ বছরে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের  জল-স্থল ভাগের সম্পদ ও বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীকূল পাহারার জ্বালানী খরচ বাবদ ৫৪টি ক্যাম্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১৫ লাখ টাকা। বাগেরহাটে বন অধিদপ্তরের ‘বাঘ সংরক্ষণ ও আমাদের করনীয়’ বিষয়ে কর্মশালায় এ কথা জানানো হয়েছে।

উপ-প্রধান বন সংরক্ষক ও বাঘ সংরক্ষন প্রকল্পের পরিচালক আকবর হোসাইন চাঞ্চল্যকর এতথ্য প্রকাশ করলে সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় বন অধিদপ্তরের চরম দায়িত্বহীনতা নিয়ে কর্মশালায় অংশ গ্রহনকারীরা হতবাগ হয়ে যান।

এবিষয়ে কর্মশালার বিশেষ অতিথি মংলা কোষ্টগার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী মেহেদী মাসুদ জানান, তার অধিনে কোষ্টগাডের্র ১০টি ক্যাম্পে মাত্র এক মাসে ফুয়েল খরচ হয়েছে ১৮ লাখ টাকার। আর সারা বছরে সুন্দরবনের ৫৪টি ক্যাম্পের ফুয়েল খরচের বরাদ্দ মাত্র ১৫ লাখ টাকা ? এই পরিস্থিতিতে কি ভাবে বাঘসহ সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব ? তা নিয়ে কর্মশালায় অংশ গ্রহনকারীরা প্রশ্ন তোলেন। শনিবার বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় তখন প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ক এই কর্মশালায় অংশ গ্রহণকারীরা বলেছেন, সুন্দরবন একটি অতি নিবিড় প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পদ। রয়েল বেঙ্গল টাইগার এই সুন্দরবনের প্রাণ। সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে আগে বাঘ বাঁচাতে হবে। কিন্তু সুন্দরবনে বাঘের অস্তিত্ব অতিমাত্রায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তাই সুন্দরবন তথা বাঘ বাঁচাতে সাময়িক ভাবে হলেও সুন্দরবন থেকে সব ধরণের সম্পদ আহরোণ বন্ধ রাখতে হবে।

সুন্দরবন ব্যাবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝুঁকি ভাতা প্রদান, বনে ভ্রম্যমান মেডিকেল সেন্টার- অগ্নি র্নিবাপক জলযানসহ অধিক হারে বন রক্ষী নিয়োগ দিতে হবে। বনদস্যুরা সুন্দরবনে বাঘ হত্যায় লিপ্ত হওয়ায় গত দু‘তিন বছরের মধ্যে বাঘ নিধনের ঘটনা আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে। গডফাদারদের চিহ্নিত করাসহ বনদস্যুদের প্রতিহত না করতে পারলে অতি দ্রুত সুন্দরবন থেকে বাঘ হারিয়ে যাবে। বক্তারা প্রচলিত আইনে বাঘ হত্যার অপরাধে পাঁচ বছর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধানের স্থলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযুক্ত করার দাবি জানান।

কর্মশালা আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সর্বশেষ বাঘ জরিপের ফলাফল অনুযায়ী সুন্দরবনে মাত্র ১০৬টি বাঘ রয়েছে। বিগত দিনে সুন্দরবনে চোরা শিকারীদের হাতে বাঘ হত্যার ঘটনা ছিল বছরে গড়ে দুটি। কিন্তু চলতি বছর এই সংখ্যা হয়েছে পনেরোটি। সুন্দরবনে এখন বনদস্যুরা বাঘ হত্যা ও পাচারের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। বিষয়গুলো বন বিভাগের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিতে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে শনিবার দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো: ইউনুস আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো: আকবর হোসেন, কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী মেহেদী মাসুদ ও বাগেরহাটের পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্ল্যা।

প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী বলেন, সংরক্ষিত বনসহ সুন্দরবনের ভেতরে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল এবং সুন্দরবন থেকে সব ধরণের সম্পদ আহোরণ বন্ধের বিষয়ে প্রস্তাব সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। এই বিধান কার্যকর করা গেলে সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও বনদস্যু সনাক্ত করা সহজতর হবে। ক্যামেরা ট্র্যাপিং বা পায়ের ছাপ গণণার (পাগমার্ক) মত বাঘ গণনার পদ্ধতিগুলো শতভাগ ক্রুটিমুক্ত না হলেও বিজ্ঞানসম্মত।

এসব পদ্ধতি প্রয়োগ করে কাছাকাছি একটি পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। উপযুক্ত গবেষণা না হওয়ায় বন বিভাগের কাছে এখনও সুন্দরবনের বাঘ বিষয়ে অনেক তথ্য সংকট রয়েছে। বাঘের রোগ-ব্যাধি, মা বাঘের প্রজনন সামর্থ্য, সুন্দরবনে বাঘের টিকে থাকার সক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।

উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো. আকবর হোসেন বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাঘের চামড়া ও হাড়সহ শিকারী বা বহনকারীদের ধরতে পারলেও পাচারকারী চক্রের মুল হোতা ও বিনিয়োগকারীদের ধরা যাচ্ছে না। তিনি এদের ধরতে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী মেহেদী মাসুদ বলেন, বন বিভাগসহ সুন্দরবন ও তার সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখনও সমন্বয়, আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে।

বাগেরহাট বন আদালতের বিচারক মো. জাহিদুল আজাদ বলেন, যথাযথভাবে মামলা উপস্থাপন না করতে পারায় বা জব্দকৃত আলামত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা সনাক্ত না হওয়ায় অনেক সময় অভিযুক্তরা অব্যহতি পান। চলতি বছর বাগেরাহট বন আদালতে নিষ্পত্তিকৃত মামলার হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ২৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে কুড়িটি মামলায় সাজা হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের অর্থায়নে ‘বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের‘ আওতায় খুলনা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ ও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ যৌথভাবে কর্মশালাটি আয়োজন করে।

কর্মশালায় বাঘ সংরক্ষণ, সর্বশেষ বাঘ গণনা ও সুন্দরবনের সার্বিক অবস্থা বিষয়ে তিনটি মাল্টি মিডিয়া প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন যথাক্রমে খুলনা বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম, সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জহির আহমেদ ও খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক সুনীল কুমার কুণ্ডু।

(একে/এএস/অক্টোবর ১০, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test