E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘আমি জনগণের সেবক, সেবা করতে এসেছি’

২০১৫ ডিসেম্বর ১২ ১৮:৪০:০৩
‘আমি জনগণের সেবক, সেবা করতে এসেছি’

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে বড় কিছু নয়, আমি জনগণের সেবক, জনগণের সেবা করতে এসেছি, জনগণের সেবা করতে চাই। আমি জাতির জনকের সন্তান এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আমার  আর কি হতে পারে। আমি জাতির জনকের কন্যা হিসেবে গর্বিত। শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর জন্য নদী শাসন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

বিপুল উদ্দীনপনা নিয়ে শনিবার ঘুম ভেঙ্গেছিলো শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মা পাড়ের লাখো মানুষসহ জেলার সর্বস্তরের সকল জনপদের লোকদের। কারণ, তারা আগে থেকেই জানতো তাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, সুযোগ্য রাষ্ট্র নায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনা কোটি মানুষের স্বপ্নের ফসল পদ্মা সেতুর মূল কাজের শুভ উদ্বোধন করতে আসবেন। কিন্তু, শনিবারের সকাল কেউ চোখে দেখেনি। মধ্য রাত থেকেই প্রকৃতি ঢেকে গিয়েছিলো ঘন কুয়াশায়। বার বার সূর্য্য রশ্মি উকি ঝুঁকি মারলেও মেঠো পথের সীমানায় পৌছতে হামাগুড়ি খেতে হয়েছে সকাল সাড়ে ৯ টা অবধি।

প্রধানমন্ত্রী সকাল ৯ টা ৪০ মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে জাজিরার পদ্মা সেতু পয়েন্টে অবতরনের কথা থাকলেও প্রকৃতির এই খামখেয়ালীপনার কারনে দেড় ঘন্টা দেরীতে তাকে আসতে হয় এই প্রিয় মাটিতে। ১১ টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী কপ্টারটি অবতরণ করে। ১১ টা ১৬ মিনিটের সময় তিনি পদ্মা সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে ১২ কিলো মিটার নদী শাসনের জন্য নির্মিত ফলক উন্মোচন করে নদী শাসনের শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি মন্ত্রী পরিষদের সম্মানীত সদস্যদের নিয়ে এক দীর্ঘ মুনাজাতের মাধ্যমে সেতু নির্মানের সফল বাস্তবায়ন কামনা করেন সৃষ্টিকর্তার কাছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, সড়ক বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় কর্তৃক আয়োজিত সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক সুধিসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। এসময় তাঁর সাথে মঞ্চে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওয়ায়দুল কাদের এবং শরীয়তপুর-১ আসনের সাংসদ বি,এম মোজাম্মেল হক।

বেলা ১১টা ৩৫ মিনিট থেকে ১১ টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত ২১ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের দুখী মানুষের সুখের কথা ভেবে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা জাতীয় বাজেটকে চার গুনে উন্নীত করেছি। তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশকে স্বাবলম্বি করা, কিন্তু কারো কাছে হাত পেতে নয়। আজকে বাংলাদেশকে খাদ্যের জন্য কারো কাছে হাত পাততে হয়না, ভিক্ষা চাইতে হয়না, আমরাই উৎপাদন করি। জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগনের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের দেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর। দেশের এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদি থাকেনা। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শুধু ক্রিকেটেই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনেও সেঞ্চুরি করে দেখিয়ে দিয়েছি। আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্ন দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে সরকার সে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণ হলে দেশের ব্যাপক উন্নতি হবে, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধি পাবে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল হবে। তিনি বলেন, সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির আশংকা ছিল বাহানা। বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ অসত্য প্রমাণ হয়েছে। আসলে তাদের চেষ্টা ছিল যাতে করে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন না হয়। বিশ্ব ব্যাংকের যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়াই পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। আমি একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেই। আমি ঘোষনা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করবো। বাংলাদেশের জনগনের কাছে সেদিন অভ’তপূর্ব সাড়া পেয়েছিলাম। অনেক মানুষ টাকা দিতে প্রস্তুত ছিল। বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা নেবনা। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করবো। আজকে আল্লাহর রহমতে সে লক্ষ্যে আমরা পৌছেছি । এ জন্য আমি বাংলাদেশের জনগনের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

শরীয়তপুরের জাজিরা নাওডোবা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর নদী শাসন কাজের উদ্ধোধী অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি , কর্নেল অব শওকত আলী এমপি, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক ,সংসদ সদস্য নুরে আলম চৌধুরী লিটন ,পংকজ দেবনাথ সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, সেনাবাহীনির প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোঃ শহিদুল হক, আই জি পি একেএম শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, আওয়ামীলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম এনামূল হক শামীম, শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন, পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকা সিকদার, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আঃ রব মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড.আব্দুস সোবহান গোলাপ, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

মাত্র এক হাজার মানুষের জন্য সুধি সমাবেশের আয়োজন করে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করলেও বোর ৬ টা থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ জাজিরার নাওডোবার সমাবেশস্থলে হাজির হতে শুরু করে। এক পর্যায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ প্যান্ডেল থেকে খানিক দুরে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগানে অভিভাদন জানাতে থাকে তাদের প্রিয় সভানেত্রীকে। আর নেতার মুখের অমৃত ভাষণ শোনার জন্যও অপেক্ষা করতে থাকে তারা।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর জাপনে গিয়ে যমুনা সেতুর জন্য টাকা এনেছিলেন। সেটা বাস্তবায়ন হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষতায় আসার পর জাপানে গিয়ে সেখানে আমি বলেছিলাম আমাকে দুটি সেতু মিার্ণের টাকা দিতে হবে। আমার স্বপ্ন ছিল পদ্মা ও রুপসা সেতু নির্মাণ করা। তাই ২০০১ সালে আমি পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্থর করেছিলাম। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা বন্ধ করে দেয়। তারা এ জায়গায় পদ্মাসেতু করবেনা। তারা করবে পাটুরিয়ায়। তারা আমাদের সরকারের নেয়া অনেক কর্মসূচী বন্ধ করে দিয়েছে। পুনরায় আমরা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আবার পদ্মাসেতু করার উদ্যোগ নেই। সেতু নির্মানের চেষ্টাকে ব্যাহত করার জন্য এ দেশ থেকে অনেক বিদেশে ই-মেইল গিয়েছে । কিন্তু পারেনি। দেশের মানুষ আমার পাশে ছিলো। আমি দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করি। বাংলার শোষিত মানুষের উন্নয়ন করাই আমার কাজ।

মুজিব কন্যা বলেন, এ সেতু নির্মিত হলে দক্ষিনাঞ্চলহ সারা দেশের উন্নতি হবে। বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হবে। দক্ষিাঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে । কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ এলাকায় আধুনিক স্যাটেলাইট দৃষ্টি নন্দন শহর গড়ে উঠবে। এ এলাকার জনগনকে উদেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন সেতুর জন্য আপনারা যারা ভিটেমাটি ছেড়ে দিয়ে দেশের বৃহত্তম সেতু নির্মাণ করতে সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছে আমি ও আমার সরকার কৃতজ্ঞ। উপরে মহান রাব্বুল আলামিন এবং আপনারই শক্তি। সরকার আপনাদের পাশে থাকবে, আপনাদের যাতে কোন কষ্ট না হয় সে ব্যবস্থা আমরা করে দিব। আপনারা অচিরেই দেখতে পাবেন এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক চেহারা পাল্টে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, পদ্মাসেতুর কাজ সময়মত শেষ করে আমরা এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরন করবো ইনশ আল্লাহ।

(কেএনআই/এএস/ডিসেম্বর ১২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test