E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে

২০১৬ জানুয়ারি ১১ ০৯:৩৫:৪১
আজ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে

স্টাফ রিপোর্টার :অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে পদমর্যাদা অবনমন ও বেতনবৈষম্য নিরসনে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়াসহ অন্যান্য অসংগতি দূর করার দাবিতে আজ সোমবার থেকে ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে এ কর্মবিরতি পালিত হবে।

অন্যদিকে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল এবং ক্যাডার ও নন-ক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ কয়েকটি দাবিতে আজ থেকে এক সপ্তাহ প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবেন প্রকৃচি (প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-চিকিৎসক) এবং ২৬টি ক্যাডারসহ বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তারা। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও দেড় ঘণ্টার ‘গেট গ্যাদারিং’ অব্যাহত থাকবে।

৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হচ্ছে। কর্মসূচি চলাকালে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্সসহ সব ধরনের নিয়মিত ক্লাস বন্ধ থাকবে। তবে সেমিস্টার ফাইনাল বা কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। গতকাল রবিবার বিবৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ফেডারেশন। ফেডারেশন বলছে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।

শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব ড. এ এম এম মাকসুদ কামালের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। অন্যান্য অসংগতি দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কাজেই দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালিত হবে। দাবি

আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। তবে শিক্ষার্থীদের অনুরোধে ও তাদের শিক্ষাজীবনের কথা বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সেমিস্টার ও কোর্স ফাইনাল পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও মিডটার্মসহ অন্য সব পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। সান্ধ্য কোর্সগুলোর ক্ষেত্রেও পরীক্ষা স্থগিত থাকবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও ফেডারেশনের মহাসচিব এস এম মাকসুদ কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, পরীক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সিদ্ধান্ত নেবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। দাবি বাস্তবায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করলে আন্দোলন শিথিল করা হবে। অন্যথায় অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন চলবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি নিজ নিজ বিদ্যালয়ের ওপর ছেড়ে দিলেও বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই পরীক্ষা নেবে কি না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানতে পারেনি, পরীক্ষা হবে কি না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুক্তি, সাধারণ সভা করে ক্লাস-পরীক্ষা দুটিই না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন হুট করে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যাবে—এ রকমটা বললেই তো হবে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খবির উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফেডারেশন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অথচ এখন বলছে স্ব স্ব শিক্ষক সমিতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তাহলে হঠাৎ করে নেওয়া সিদ্ধান্ত তো সবার নয়। তাই আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফেডারেশনের সাধারণ সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটাই কার্যকর হবে।’

অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের পদমর্যাদা অবনমনের প্রতিবাদ, স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন এবং সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে আট মাস ধরে আন্দোলন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শুরুতে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, বক্তব্য-বিবৃতি ও নির্দিষ্ট সময় ধরে কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। সরকারের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় গত ৮ সেপ্টেম্বর পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিরা দেখা করলে মন্ত্রীরা তাঁদের দাবির ব্যাপারটি পর্যালোচনার আশ্বাস দেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে প্রধান করে বেতন বৈষম্য নিরসনসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গঠিত হয়।

তবে গত ১৫ ডিসেম্বর পে স্কেলের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের পর তাতে শিক্ষকদের দাবির কোনো প্রতিফলন ঘটেনি বলে অভিযোগ করে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তাদের অভিযোগ, গত ৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও গেজেটে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ জানুয়ারি ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। ওই সভা থেকে ১০ জানুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষকরা। বৈঠকে কালো ব্যাজ ধারণ, দুই ঘণ্টা কর্মবিরতিসহ ১১ জানুয়ারি (আজ) থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন।

প্রকৃচি ও ২৬ ক্যাডার কর্মকর্তাদের দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু আজ : বেতন স্কেল ও ক্যাডার, নন-ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক এবং ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তারা আজ থেকে প্রতিদিন দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত তাঁদের কর্মবিরতি চলবে। কর্মসূচি চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। একই সঙ্গে কালো ব্যাজ ধারণ করবেন কর্মকর্তারা। এ সময় সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ থেকে তাঁরা বিরত থাকবেন।

বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল, সরকারি প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে ক্যাডার, নন-ক্যাডার বৈষম্যের সিদ্ধান্ত বাতিল, ইউএনওকে কর্তৃত্ব প্রদানমূলক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস স্মারক বাতিল, আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন এবং সব ক্যাডার ও সার্ভিসে পদোন্নতির সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সুপারনিউমারারি পদ সৃজন, নিজস্ব ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিসবহির্ভূত সব ধরনের প্রেষণ বাতিল এবং কৃত্য পেশাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তোলার দাবিতে আন্দোলন করছে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের গেট গ্যাদারিং : অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে অবনমনের প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো দেড় ঘণ্টার গেট গ্যাদারিং (গেটের সামনে অবস্থান) কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। গতকাল সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি ছয় দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ৭ থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত গেট গ্যাদারিং কর্মসূচি চলবে। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ১৪ জানুয়ারির পর থেকে গণছুটি, পূর্ণ কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের নেতারা।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ভবনের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খান রাজিব ও বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাশ) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সরকার ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেটে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করা, কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ পদ ‘নির্বাহী পরিচালক’ পদকে প্রথম গ্রেডে উন্নীতকরণ, অন্য পদগুলোর বেতন গ্রেড ক্যাডার সার্ভিসের পদবিন্যাস অনুযায়ী নির্ধারণ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগদানকারী সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রবেশ পদকে অষ্টম গ্রেডে নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

(ওএস/এস/জানুয়ারি১১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test