E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা শুরু

২০১৭ জানুয়ারি ১৩ ১১:২০:৩৯
তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা শুরু

গাজীপুর প্রতিনিধি : টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ওবায়দুল খোরশেদের আমবয়ানের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। তার বয়ানটি বাংলায় তরজমা করছেন বাংলাদেশের মাওলানা জাকির হোসেন। দুপুর দেড়টায় বৃহত্তম জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের মাওলানা সা’দ জুম্মার নামাজ পরিচালনা করবেন।

শীত ও যানজট উপেক্ষা করে টঙ্গীর তুরাগ তীর-সংলগ্ন ইজতেমাস্থলের দিকে মুসল্লিরা দূর ধুরান্ত থেকে এখনো আসছেন। গত বুধবার থেকেই তুরাগতীরে জড়ো হতে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে ইজতেমায় অংশ নেওয়ার জন্য বিদেশি মুসল্লিদের কেউ কেউ দু-একদিন আগেই ইজতেমাস্থলে এসে পৌঁছেছেন। চিল্লাধারী মুসল্লিদের পাশাপাশি ইজতেমা ময়দানে শুক্রবারের বৃহত্তম জুম্মার নামাজ আদায় করতে আশে-পাশের জেলা ও এলাকার মুসল্লিদের ভিড় এড়াতে ভোর থেকে সেখানে জমায়েত হচ্ছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৫ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। ফজরের নামাজের পর দুই মুসল্লির নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তারা হলেন- টাঙ্গাইলের জানু ফকির (৭০) ও মানিকগঞ্জের সাহেব আলী (৩৫)। এর আগে কক্সবাজারের হোসেন আলী (৬৫), ময়মনসিংহের ফজলুল হক (৫৬) এবং আব্দুস সাত্তারের মৃত্যু হয় ইজতেমার চলতি পর্বেই।

১৫ জানুয়ারি (রবিবার) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। চার দিন বিরতির পর ২০ জানুয়ারি (শুক্রবার) থেকে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। ২২ জানুয়ারি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে।

১৯৬৬ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বলতে গেলে নিয়মিতই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মুসল্লিদের চাপ কমাতে ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমাকে দুই পর্বে বিভক্ত করা হলে ওই বছরই প্রথম দুই দফায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে এ ধারায় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তারপরও স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১৫ সাল থেকে দেশের অর্ধেক জেলা প্রথম দুইধাপে এবং বাকি অর্ধেক জেলার মুসল্লিরা পরের বছর দুই ধাপে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টঙ্গীর বিভিন্ন মৌজায় বিশ্ব ইজতেমার জন্য ১৬০ একর ভূমি বরাদ্দ দেন।

এদিকে বিআরটিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মুসল্লিদের সুবিধার্থে গত বুধবার (১১ জানুয়ারি) থেকেই বিআরটিসি বিভিন্ন রুটে ২২৮টি স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু করেছে। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এ সার্ভিস অব্যাহত থাকবে বলে বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে। ১১ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত চলাচলকারী স্পেশাল বাসের মধ্যে তিনটি বাস বিদেশি মুসল্লিদের জন্য সংরক্ষিত থাকছে। আব্দুল্লাহপুর থেকে ইজতেমাস্থল হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ২৯টি বাস, শিববাড়ী থেকে ইজতেমাস্থল হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ১৩টি, টঙ্গী থেকে ইজতেমাস্থল হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ১৭টি, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ইজতেমাস্থল হয়ে মতিঝিল পরযন্ত ৬টি, গাবতলী থেকে ইজতেমাস্থল হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত ৫টি, গাবতলী থেকে ইজতেমাস্থল হয়ে মহাখালী পর্যন্ত ৩৫টি, গাজীপুর- ইজতেমাস্থল হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ২৫টি, বাইপাইল থেকে ইজতেমাস্থল হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত আরো ২০টি বাস চলবে।

এছাড়া ঢাকা থেকে ইজতেমাস্থল হয়ে নরসিংদী পর্যন্ত ২০টি, চট্টগ্রাম-সাভার রোডে ২০টি এবং ঢাকা-কুমিল্লা রোডে চলবে আরো ১৫টি বাস।

অন্যদিকে বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের যাতায়াতে সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে। পাশাপাশি সব আন্তনগর, মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী তুরাগ নদের ৭টি স্থানে (পন্টুন) ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ জানান, ইজতেমা মাঠে স্থাপিত ১২টি নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি ৫৫ লাখ গ্যালনেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অজু-গোসলের হাউস, টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশা নিধনের জন্য ২৪টি ফগার মেশিন ও ধুলাবলি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ডেসকোর টঙ্গী পূর্ব বিভাগের উপসহকারি প্রকৌশলী মো. হাসিবুল ইসলাম জানান, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে মূল ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। যেকোনো একটি গ্রিড নষ্ট হলেও সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না। ইজতেমা এলাকায় চারটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর এবং পাঁচটি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমারও সংরক্ষণ করা হয়েছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারি পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করবেন। ময়দানের প্রতি খিত্তায় ফায়ার ডিস্টিংগুইসারসহ ফায়ারম্যান, গুদামঘর ও বিদেশি মেহমানখানা এলাকায় পানিবাহী গাড়ি, তিন সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, একটি স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট ও পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে।

টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. পারভেজ আলম জানান, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নিয়মিত শয্যা ছাড়াও অতিরিক্ত শয্যা বাড়িয়ে মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারখানার গেট, টঙ্গী হাসপাতাল মাঠসহ ছয়টি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ণ, চক্ষু, ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেবেন। রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ইজতেমা মাঠের দায়িত্বে নিয়োজিত মুরব্বি গিয়াসউদ্দিন জানান, তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমায় দেশি মুসল্লি ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা অংশ নিয়ে থাকেন। প্রতিবারের মতো ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিমাংশে বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষভাবে টিনের ছাউনির মাধ্যমে পৃথক কামরা তৈরি করা হয়েছে। এবার তাদের জন্য ২০ শতাংশ আবসানসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকে ছয় হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য ইজতেমাস্থলে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে। টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে পুলিশের কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে।ইজতেমা এলাকায় বাইনোকুলার, সিসি ক্যামেরা, ওয়াচটাওয়ার, মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে, পোশাকে-সাদা পোশাকে পুলিশ, স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও আনসার সদস্য ও তাবলীগ সদস্যরাও কাজ করছেন।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test