E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুসার বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ প্রমাণিত

২০১৭ মে ০৭ ১৮:৩০:২৬
মুসার বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ প্রমাণিত

স্টাফ রিপোর্টার : ধনকুবের প্রিন্স মুসার বিরুদ্ধে শুল্ক গোয়েন্দাদের করা শুল্ক ফাঁকি, মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতির তিন অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

শুল্ক ফাঁকির ঘটনায় সরাসরি প্রিন্স মুসাকে প্রধান আসামি এবং মানি লন্ডারিংয়ে সহযোগী আসামি করে মোট দুটি মামলা করবে শুল্ক গোয়েন্দারা। আর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুদককে (দুর্নীতি দমন কমিশন) জানান হবে। তাদের আইনানুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবে।

রবিবার মুসা বিন শমসেরের জবানবন্দি শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান।

তিনি বলেন, প্রিন্স মুসা বিন শমসেরকে রবিবার বিকেল ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে দুই সদস্যের তদন্ত টিম। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে নানা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। তিনটি অভিযোগের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে বলে নিশ্চিত করেছেন আমাদের তদন্ত টিম। তা হলো- শুল্ক ফাঁকি, মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতি।

ইংল্যান্ডের নাগরিক ফরিদ নাবিরের কাছ থেকে ২০১০ সালের ১২ মার্চ দুই কোটি ১৫ লাখ টাকায় ল্যান্ড রোভার গাড়িটি মাত্র ৫০ লাখ টাকায় ক্রয় করেন ধনকুবের প্রিন্স মুসা। কিন্তু ফরিদ সে টাকা বাংলাদেশে না রেখে বিদেশে নিয়ে যান। যা মানি লন্ডারিং আইনের লঙ্ঘন। এজন্য ফরিদ নাবিরকে প্রধান আসামি করে মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের করা হবে। একই মামলায় সহযোগী আসামি হবেন মুসা বিন শমসেরসহ অন্য সহযোগীরা।

অন্যদিকে, গাড়িটি ক্রয় করার ক্ষেত্রে ১৭ লাখ টাকার ভুয়া বিল তৈরি করে শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়। ওই ১৭ লাখ টাকা আজও পায়নি শুল্ক বিভাগ। এজন্য তাকে সংশ্লিষ্ট আইনে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হবে।

ল্যান্ড রোভার গাড়িটি বিআরটিএ’র কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ছাড়পত্র নেয়া হয়। যা দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) আইনে অপরাধ। এজন্য আমরা দুর্নীতির বিষয়টি দুদককে জানাব। দুদুক তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

জিজ্ঞাসাবাদে মুসা কী বলেছেন- জানতে চাইলে ড. মইনুল খান বলেন, ‘তিনি দুই ঘণ্টাব্যাপী বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। আশা করছি আর তাকে ডাকতে হবে না। প্রয়োজন হলে তার পক্ষ থেকে কেউ এসে তথ্য দিয়ে যাবেন। তার বিরুদ্ধে একটি গাড়িতে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। আরও অনেক গাড়ি রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে তা যাচাই ও প্রমাণসাপেক্ষ। যদি সে রকম তথ্য-প্রমাণ মেলে তবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এর আগে, শুল্ক ফাঁকি ও মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজির হন ‘অসুস্থ’ প্রিন্স মুসা। রবিবার বিকেল ৩টার দিকে ছয়টি গাড়িতে কমপক্ষে ৩০ জন দেহরক্ষী নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজির হন তিনি। তার সঙ্গে এ সময় পাঁচ আইনজীবী ছিলেন।

দেহরক্ষীদের বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে একটি সাদা রঙের গাড়ি থেকে নেমে গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান মুসা। তার সঙ্গে লিফটে তিন থেকে চার দেহরক্ষী উপরে ওঠার সুযোগ পান। বাকিরা নিচে পার্কিংয়ে অবস্থান করেন।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান এর আগে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার উপ-পরিচালক (ডিডি) এইচ এম শরিফুল হাসানসহ দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

তবে শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ড. মইনুল খানসহ পাঁচ কর্মকর্তা মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

গত ২১ মার্চ গুলশান- ২ এর ১০৪ নম্বর রোডের ৮নং বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মুসার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি করা রেঞ্জ রোভার গাড়ি জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গাড়িটি শুল্ক পরিশোধের ভুয়া কাগজ দিয়ে ভোলা বিআরটিএ থেকে জনৈক ফারুক উজ-জামান চৌধুরীর নামে রেজিস্ট্রেশন করান হয়। গাড়িটি প্রিন্স মুসা বিন শমসের নিজে ব্যবহার করে আসছিলেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর তার দখল থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। তদন্তের স্বার্থে গত ২০ এপ্রিল শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিলে প্রিন্স মুসা আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ‘বাকশক্তি হারিয়েছেন’ দাবি করে সময় প্রার্থনা করেন।

প্রিন্স মুসার সময় প্রার্থনার আবেদন মঞ্জুর করে শুল্ক গোয়েন্দারা ১৫ দিনের সময় দেন। রবিবার গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজিরা দেন প্রিন্স মুসা।

শুল্ক ফাঁকির ঘটনাটি তদন্তের জন্য উপ-পরিচালক এইচ এম শরিফুল হাসানকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

(ওএস/এএস/মে ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test