E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বেহাল দশায় রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা

২০১৭ মে ১১ ১২:৩০:৫৬
বেহাল দশায় রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার : এমনিতেই অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে পিষ্ট রাজধানী। তার উপর শহরের বিভিন্ন জায়গায় চলছে ফ্লাইওভার সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কাজ।  রাস্তায় খোঁড়াখুড়ি কারণে জায়গাতেই উভয় পাশের গাড়ি পারাপার হচ্ছে একটি রাস্তা দিয়ে। এতে অতিরিক্ত চাপের কারণে এসব সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালও অনেক সময় অকার্যকর হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ট্রাফিক পুলিশকে হাত উঁচিয়ে ট্রাফিক সিগনাল দিতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একমাত্র ঢাকা শহর ছাড়া বিশ্বের উন্নয়ন শহরের কোথাও হাত উঁচিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ হয় না। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ইলেট্রনিক সিগন্যাল পদ্ধতি চালুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অভাব, প্রযুক্তিদক্ষ জনবল সঙ্কটসহ সড়ক স্বল্পতার পাশাপাশি যানবাহনের আধিক্য। তবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ভিআইপি কয়েকটি সড়কে ইলেট্রনিক সিগন্যাল পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। অর্থাৎ পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়মের মধ্যে আনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ট্রাফিক কর্মকর্তারা বলছেন, তিন লাখ যানবাহন চলার উপযোগী এই শহরে প্রায় ১১ লাখ তালিকাভুক্ত যানবাহন চলাচল করছে। এর বাইরে প্রায় আট লাখ রিক্সা চলছে কোন রকম অনুমোদন ছাড়াই। সিগন্যাল পদ্ধতিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সবকিছুতেই আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সঙ্গে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষিত জনবল বাড়ানোর বিকল্প নেই। আস্তে আস্তে বিভিন্ন এলাকা স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে বলেও মনে করে ট্রাফিক বিভাগের কর্তা-ব্যক্তিরা।

রাজধানীর যানজট নিরসনকল্পে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থায় কয়েকটি যান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হলেও তার কোনটিই কাজে আসেনি। শেষমেশ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুলিশ বিভাগকে হাতের সংকেতের মাধ্যমেই পালন করতে হয়েছে। ঢাকার সিগন্যাল বাতি রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা ছিল। মুখ থুবড়ে পড়ে এই পরিকল্পনা। এরপর নেয়া হয় প্যানেল বোর্ড পদ্ধতি, যা এখনও পরীক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছে। গত ১৬ বছরে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি নিয়ে তিন দফায় প্রকল্প হাতে নেয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। এতে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হলেও রাজধানীবাসী কোন সুফল পায়নি।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৫ মে পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর কাকলী থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ১১টি পয়েন্টে অটোসিগন্যাল চালু করা হয়েছিল। কিন্তু চালুর পরই তীব্র যানজটে পুরো ঢাকা স্থবির হয়ে পড়ে। তিন-চার দিনের মাথায় ব্যয়বহুল এই ব্যবস্থার পরিবর্তে পুলিশ সেই হাত ও বাঁশির ব্যবস্থায় ফিরে যায়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ’ প্রকল্পের অধীনে নগরীর বিভিন্ন স্থানে সোলার প্যানেল, টাইমার কাউন্ট-ডাউন স্থাপন এবং বিভিন্ন সিগন্যালে যেসব বাতি নষ্ট ছিল সেগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। পরিকল্পনা ছিল এসব সিগন্যাল বাতি ভারতের দিল্লী ও মুম্বাইয়ের আদলে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এজন্য ভারতীয় একটি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষামূলকভাবে একটি রিমোট কন্ট্রোল আনা হয়েছিল। কিন্তু তা আমাদের সিস্টেমের সঙ্গে মেলেনি। তাছাড়া ভারতীয় ওই প্রতিষ্ঠান শেষটায় জানিয়ে দিয়েছে এদেশের সিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রিমোট তৈরি করা সম্ভব না। ফলে বাতিল হয় পদ্ধতিটি।

তিনি বলেন, সর্বশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয় প্যানেল বোর্ড সিস্টেম। সড়কে যানবাহনের চাপ অনুযায়ী বোর্ডে লাগানো পেন্ডুলাম ঘুরিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালের সময় নির্ধারণ। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সম্প্রতি রাজধানীর দৈনিক বাংলার মোড়ে পরীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সিগন্যাল বাতির বোর্ড নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

নগরীর যানজট কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে মোসলেহ উদ্দিন বলেন, প্রায় দুই কোটি মানুষের নগরী ঢাকা। যেখানে রাস্তা থাকার কথা ২৫ ভাগ। সেখানে আছে মাত্র ৮ ভাগ। তিনি বলেন, রাজধানীর সড়ক তিন লাখ যান চলাচলের উপযোগী। কিন্তু বর্তমানে রাজধানীতে চলে ১১ লাখ যানবাহন। তাই চলমান ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।

এ ব্যাপারে সড়ক বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোঃ শামসুল হক বলেন, ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ে অনেক পাগলামি হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে আসে, কিন্তু সেটা ব্যবহার করার মানসিকতা নেই। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এসব ব্যক্তিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, পুলিশ ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার দায়িত্ব নিলে ভাল। তবে তার আগে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পুলিশের ট্রাফিক প্রকৌশল বিভাগ করে দিতে হবে। বিশেষায়িত এই বিভাগ সারা বছর সিগন্যালের বিষয় দেখাশোনা করবে।

(ওএস/এসপি/মে ১১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test