E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বাজেট-২০১৪ পাস

২০১৪ জুন ২৯ ১১:৫৪:৫৩
বাজেট-২০১৪ পাস

স্টাফ রিপোর্টার : আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে পাস করা হল বাজেট- ২০১৪। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারকে ‘স্থিতিশীল’ উল্লেখ করে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ইন্সট্রুমেন্ট চালু এবং পেনশন বন্ড ও বন্ড বাজারের বিষয়টি আগামী বছর বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

শনিবার দশম জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশনে কণ্ঠভোটের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে অর্থবিল- ২০১৪ পাস করা হয়।

অর্থমন্ত্রী তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের (২০১৩-১৪) শুরুতে হরতাল ও অবরোধ থাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি ছিল। এখন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে, যা দেশের সরবরাহ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক রাখবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশসহ বহির্বিশ্বে খাদ্যের মূল্য হ্রাসের ধারা অব্যাহত থাকায় সামনের দিনগুলোতে খাদ্যপণ্যের মূল্য অনেকটাই কমবে। সর্বোপরি সন্তোষজনক কৃষি উৎপাদন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়ক মুদ্রানীতির প্রভাবে সাধারণ মূল্যস্ফীতি কমবে।’

শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে পুঁজিবাজারকে একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আনা হয়েছে। পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে আসতে হবে। পেনশন বন্ড অথবা বন্ড বাজারের বিষয় দুটি আমরা আগামী বছর বিবেচনা করব।’

কালো টাকা সাদা

অর্থবিল- ২০১৪ পাসের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ট্রেজারি বন্ড ক্রয়ের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ জরিমানা, আবাসন খাতে জরিমানা ছাড়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে গোপন রাখা অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) জরিমানা দিয়ে সাদা করা যাবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আয়কর অধ্যাদেশে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে কারও কারও মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। অর্থআইন- ২০১১ এর মাধ্যমে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা অর্থের উপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করলে বিনিয়োগকৃত অর্থ বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার বিধান রাখা হয়। বাস্তবে এ বিধানের সুযোগ করদাতারা গ্রহণ করেননি এবং এ সুযোগ রাখতে চাই না বিধায় এ সংক্রান্ত বিধানটি বাতিলের প্রস্তাব করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবাসন খাতে প্রতিবর্গমিটারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদান করলে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগ মেনে নেওয়ার বিধানটি কর প্রদান পদ্ধতিতে সরলীকরণ মাত্র। কোন করদাতা অতীতে তার আয়ের (অপ্রদর্শিত অর্থ) উপর সঠিকভাবে কর পরিশোধ না করলে পরবর্তীতে প্রযোজ্য কর এবং জরিমানা পরিশোধ করে কর অনারোপিত আয়ের উপর কর পরিশোধ করতে পারেন।’

মুহিত বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে করদাতাকে কোন ছাড় দেওয়া হয়নি। প্রচলিত হারেই তাকে জরিমানাসহ কর দিতে হয়। এ ধরনের সুযোগ কর প্রদান ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য রক্ষার্থে রাখা প্রয়োজন বিধায় এ দুটি বিধান অব্যাহত রাখা যায়। তবে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির মাধ্যমে আয়ের টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে না।’

আলোচনা শেষে অর্থমন্ত্রী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের অর্থবিলটি পাসের অনুমতি নেন স্পিকারের কাছ থেকে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নুরুল ইসলাম মিলন বিলটি জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দিলেও তা গ্রহণ করেননি অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বিলটি অধিকতর যাচাই-বাছাই করার প্রস্তাব করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মধ্যমেয়াদি দৃশ্যকল্প নিকট অতীতের তুলনায় অনেক বেশি অনুকূল। কাজেই নিট রফতানি এবং প্রবাস আয় চ্যানেলেও প্রবৃদ্ধির গতি বাড়বে। ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ, রফতানি ও আমদানি প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে নিট রফতানি প্রবাস আয় বাড়বে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমান অবস্থায় থাকলে আগামী দিনগুলোতে খাদ্যমূল্য কমবে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে। সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে অপ্রত্যাশিত মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে কারণ আমরা টাকা ছাপাই না। গড়পত্তায় ৬ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি আছে।’

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর মতো এবারও অনেকে বাজেটকে স্বপ্নবিলাস, উচ্চ বিলাস বলেছে। কিন্তু প্রস্তাবিত এ বাজেট একদিকে যেমন উন্নয়নের দলিল অন্যদিকে শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হলো ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বিনিয়োগ উদ্বুদ্ধকরণ। তবে জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন হচ্ছে। সেবা খাতও মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে।’

মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ আবার প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেছেন। উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে- এমন অনুমান হতে হয়ত এ রূপ সমালোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সমান তালে সামগ্রিক যোগান বাড়লে উচ্চ প্রবৃদ্ধি আবশ্যিকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় না।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত মোবাইল টেলিফোন ব্যবহারের উপর সারচার্জ থেকে অর্জিত আয় শিক্ষা ও সেবা খাতে বরাদ্দ রাখছি।’

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে মূল সেতুর নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন কাজ সমাপ্তির পথে। জুলাই মাসেই নদী শাসন কাজের ঠিকাদার নিযুক্ত করা হবে। পদ্মা সেতুর জন্য আমাদের অর্থ সংস্থানে কোনো ঘাটতি থাকবে না। যে বৈদেশিক সাহায্য পদ্মা সেতুর জন্য পাওয়া যেত সেটা অন্যত্র ব্যবহারের চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। সেদিকে বাস্তবেই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’

‘সর্বত্র গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়’ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাসের সরবরাহ নিতান্তই সীমিত। আমরা বিদেশ থেকে এলএনজি আনার ব্যবস্থা করছি। আমরা সিলিন্ডারের মাধ্যমে এলপিজি সরবরাহের ব্যবস্থা বাড়াচ্ছি। এগুলোর মাধ্যমেই আমাদের গৃহস্থালি কাজের জন্য এবং ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য জ্বালানি সংকট মেটাতে হবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা অবস্থার উন্নতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বর্তমান রাজনৈতিক বিভাজনকে সংস্কারের উদ্যোগ আমাদের নিতে হবে।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমপিও ব্যবস্থাটির পরিবর্তনের উদ্যোগ আগামী বছরে গ্রহণ করব। আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষা মোটামুটিভাবে ব্যক্তিমালিকানা খাতের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং সরকার সেখানে শুধুমাত্র সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই ব্যবস্থা বর্তমানে চলছে না।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গৃহনির্মাণ বিনিয়োগের পরিমাণ বিবেচনায় ফ্ল্যাট বা দালান বাড়ি বিক্রয়ে প্রাপ্ত মুনাফার ওপর উৎসে কর হ্রাস করা হয়েছে। প্রতি বর্গফুট ৯০ টাকা হারে উৎসে কর কর্তনের পরিবর্তে প্রতি বর্গফুট ৫৫.৭৬ টাকা হারে কর্তন করা হবে (যা প্রতি বর্গমিটারে ৬০০ টাকা)।’

মন্ত্রী বলেন, ‘অর্থবিল- ২০১৪ দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সুপারিশ অনুসারে ব্যক্তি ও অংশীদারি ব্যবসায়ের বিক্রয় বা মোট প্রাপ্তি ৫ কোটি টাকার বেশি হলে পেশাদার হিসাব বিজ্ঞানীর সনদ দেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে করদাতার হিসাব পরীক্ষা এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের সার্টিফিকেশন উভয়ক্ষেত্রে চার্টার্ড একাউন্টেন্টদের পাশাপাশি কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্টগণকে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে।’

(ওএস/এইচআর/জুন ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test