E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গুয়ার পথে...

২০১৬ মে ০৬ ১৬:২৬:১০
টাঙ্গুয়ার পথে...

মো. জাভেদ হাকিম : প্রকৃতি আমাকে এবং আমার কয়েক বন্ধুকে এতটাই ভালোবাসতে শুরু করেছে যে, ছুটি পেলেই প্রকৃতির টানে ঘর ছেড়ে ছুটে চলে যাই বহুদূর অপার সৌন্দর্যের অধিকারী প্রাকৃতিক কোনো এক লীলাভূমির প্রান্তরে। সেখানে হাজির হয়ে বলে উঠি—আমরা এসেছি তোমার প্রেমের টানে বরণ করে নাও, তোমার অপার সৌন্দর্য দিয়ে।

প্রকৃতিও আমাদের সানন্দে বরণ করে নেয়, তা না হলে দেশের দর্শনীয় স্থানে যেতে যোগাযোগের যে অবস্থা তাতে উত্সাহ কবেই মরে যেত। গত বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারির সাথে শুক্রবারের ছুটি যোগ হওয়ায় আমি মো. জাভেদ হাকিম, কালাম, মজিবর, মোস্তাক ও নাসিরুদ্দিন কচি ভ্রমণপিপাসু প্রকৃতিপ্রেমিক পাঁচ বন্ধু সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত মেঘালায় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত মত্স ও পাখির অভয়াশ্রম টাঙ্গুয়ার হাওড়ের উদ্দেশ্যে ছুটলাম।

ভ্রমণে সহযোগিতা করলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইউসিসি কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশিদুল সিকদার রাজু ও গাইড উত্তম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে চাই অন্তর দৃষ্টি, বাহ্যিক কোনো লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করা যায় না। সময় স্বল্পতার জন্য শহর থেকে স্পিডবোট রিজার্ভ করে সুরমা নদীর উপর দিয়ে টাঙ্গুয়ার দিকে ছুটলাম। যেতে যেতে দেখা হলো সুরমার দু'পাড়ের দৃশ্য। মাঝেমধ্যে কিছু দৃশ্য দেখে মনে হলো শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো ক্যানভাস। জানা হলো সুরমার তলদেশ থেকে উঠানো কালো মাটি, পরবর্তীতে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত হয়। দেখতে দেখতে এবং গাইডের কথা শুনতে শুনতে তিন ঘণ্টা পর এসে পৌঁছালাম বিশ্বের অন্যতম অভয়াশ্রম কাঙ্ক্ষিত সেই টাঙ্গুয়া হাওড়ে।

বোট থেকে নামার পর চেনা-অচেনা নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলি আর হাওড়ের দৃশ্য দেখে মুহূর্তের মধ্যেই সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদ সাহেবের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পাখি দেখা ও চেনার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে গেলাম সবাই।

হাওড়ের স্বচ্ছ জলে পাখির নৃত্য সে এক অপূর্ব দৃশ্য। এখানে সারা বছর জুড়েই পাখির বিচরণ। স্থানীয়দের ভাষায় শীত মৌসুমে পাখির জন্য মাটির দেখা পাওয়া যায় না। টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এখনও প্রায় তিনশত প্রজাতি মাছের বিচরণ করে। হাতিগাথা চেক পোস্টের সামনে হলো মাছের প্রজনন ও অভয়াশ্রম। দুর্ভাগ্য আমাদের মোস্তাকের জন্য সেখানে যাওয়া হলো না। সে বিদেশি এক ট্যুরিস্টের আদলে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য অসংখ্য ফটোসেশনে ব্যস্ত হলো। ততক্ষণে ঘড়ির কাঁঁটায় সময় প্রায় শেষ। তবে সার্থক ওর ফটোসেশন। আমাদের বিচারে বিদেশি ট্যুরিস্টের ছবি হতে ওরটা একধাপ এগিয়ে।

স্পিডবোট স্টার্ট, ফিরে চলা যান্ত্রিক কোলাহলের শহরের পানে। চাঁদবিহীন অন্ধকারে রাত্রির আকাশে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলজ্বল করা তারাগুলো যেন আমাদের উদ্দেশ্যে বলছে তোমাদেরকে আবার আসতে হবে, আগামীর কোনো এক শীত মৌসুমে। সত্যিই আমাদের আবার যেতে হবে দুর্লভ প্রজাতির মাছের নাচ দেখতে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test