E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সকলের সহযোগিতায় পড়াশোনা করতে চান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পলাশ

২০২১ ডিসেম্বর ২৪ ১২:২০:২৩
সকলের সহযোগিতায় পড়াশোনা করতে চান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পলাশ

উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার এইচএসসি পরীক্ষার্থী পলাশ দে (২০)। সে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। চোখে তেমন একটা দেখতে না পেলেও সে মনের জোরে অদম্যভাবে নিজের পড়ালেখা এগিয়ে নিচ্ছে। কলেজ শিক্ষকদের সহযোগিতায় সে পরীক্ষা কক্ষে শ্রুতি পরীক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে এবার দিয়ে ফেললেন এইচএসসি পরীক্ষাও। 

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, পলাশ দের বাড়ি ছিলো পুরাণবাজারের হরিসভা এলাকায়। ক’বছর আগে মেঘনা নদী গ্রাস করে নেয় পলাশ দের বসতভিটাটুকু। তার বাবা শ্যামল দে ছেলের পড়ালেখার এমন ইচ্ছা দেখে ঘোষপাড়ায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। সেখানে স্ত্রী ও ২ ছেলেকে নিয়ে বাস করছেন। তিনি পেশায় একজন বাদাম-বুট বিক্রেতা। তার আয়ের টাকাতেই কোনোমতে সংসারসহ পলাশ দের পড়ালেখার খরচ চলছে।
২১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে গিয়ে দেখা যায়, সহযোগিতা নিয়ে সুন্দরভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছে পলাশ দে। এ সময় পরীক্ষা কক্ষে অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষায় অংশ নিতে দেখা গিয়েছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আইন অনুযায়ী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০% অতিরিক্ত যে সময় পাবার কথা সেটি আমরা পলাশ দেকে দিয়েছি। তার পড়ালেখার বেশ আগ্রহ রয়েছে দেখে খুব ভালো লাগলো। সমাজের বিত্তবানরা আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এলে পলাশ দে তার দৃষ্টি ফিরে পেতে পারবে বলে আমি মনে করি। সে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে দেশসেবায় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার প্রত্যাশা।

পরীক্ষা ভালো হয়েছে জানিয়ে শিক্ষার্থী পলাশ দে সাংবাদিকদের বলেন, আমি জন্মগতভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আগে এক চোখে সামান্য কিছু দেখলেও এখন দেখতে দারুণ সমস্যা অনুভব করছি। শিক্ষিত হয়ে দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার আমার ইচ্ছে রয়েছে। আমার পড়ালেখা এগিয়ে নিতে হলে চোখের আলো ফিরে পাওয়া দরকার। আমার চিকিৎসা করাটা একান্ত জরুরি। তাই আমার চিকিৎসার জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি মহোদয়সহ সমাজের বিত্তবানদের থেকে আর্থিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।

পলাশ দে’র পিতা শ্যামল দে বলেন, আমার ছেলের চিকিৎসার জন্যে গত কয়েক বছর ধরে দেশের বহু হাসপাতালে দেখিয়েছি। সর্বশেষে ঢাকা ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে দেখানোর পরে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আমার ছেলের চোখের সঠিক চিকিৎসা ভারতের কোলকাতা অথবা চেন্নাইয়ে সম্ভব। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আমরা তার চিকিৎসা করাতে পারছি না।

এ বিষয়ে পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার বলেন, পলাশ দে আমার কলেজের শিক্ষার্থী। ওর পড়ালেখার অদম্য ইচ্ছে হওয়ায় বোর্ডে আমি নিজে গিয়ে আইন অনুযায়ী পলাশের জন্য শ্রুতি পরীক্ষার্থীর ব্যবস্থা করেছি। ওর উচ্চশিক্ষা অর্জনে আমি ব্যক্তিগতভাবে ওর পাশে থাকবো। সমাজের বিত্তবানদেরও মানবিক দিক বিবেচনায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পলাশের পিতা শ্যামল দে।

(ইউএইচ/এসপি/ডিসেম্বর ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test