E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভালো নেই বীরাঙ্গনা মর্জিনা

২০১৬ ডিসেম্বর ১৪ ১৫:০১:৫৯
ভালো নেই বীরাঙ্গনা মর্জিনা

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : লোহাগড়া উপজেলার চরকালনা গ্রামের বীরঙ্গনা মর্জিনা বেগম (৬৯) ভালো নেই। তাঁর শরীরে এখন শক্তি নেই। কাজ করতে পারেন না। তাই সবদিন খাবারও জোটে না। টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন বীরাঙ্গনা মর্জিনা বেগম।

তিনি বলেন, ‘আমি বীরঙ্গনা হলেও দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫বছর । তাই আমি গর্বিত। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। তাদের খাদ্য-খাবার দিয়েছি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোন জায়গায় আছে তার খবর দিয়েছি।’

মর্জিনার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মর্জিনা বেগমের বয়স ১৭ বছর। পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় ছিল পাকিস্তানি আর্মিদের শক্ত ঘাঁটি। কাশিয়ানি উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে ছিল তাদের বাড়ি। দুই বোন ও বাবা-মাসহ চার জনের সংসার তখন। একাত্তরের মে মাসে আর্মিরা তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। একজন আর্মি তাকে তাদের রান্না ঘরে নিয়ে রাইফেল ধরে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে। কয়েকদিন পর গ্রামের রাজ্জাক মোল্লার বাড়িতে তাকে ধরে নিয়ে দুইজন আর্মি আবারও ধর্ষণ করে।

১৯৯৮ সালে বন্যায় মধুমতীর ভাঙনে শংকরপাশার বাড়ি নদীতে গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। তারপর ১২-১৩ বছর ভাটিয়াপাড়ায় সরকারি রাস্তার পাশে ছাপড়া তুলে বসবাস করেছেন মর্জিনা বেগম। বর্তমানে লোহাগড়া উপজেলার চরকালনা গ্রামে মধুমতী নদীর পশ্চিম তীরে খাস জমিতে একটি ছাপড়া ঘর তুলে মর্জিনা তার মা আলেয়া বেগমকে (৮২) নিয়ে বসবাস করছেন। আর কোনো জমিজমা নেই, নেই কোন আয়। স্বামী রিক্সাচালক পিরে শেখ মারা গেছেন পঁচিশ বছর আগে। দেশ স্বাধীনের দুই বছর পর তাদের বিয়ে হয়েছিল। দুই ছেলে ও এক মেয়ের সবার বিয়ে দিয়েছেন। দিনমজুর ছেলেরা আলাদা সংসার করছে। পরের বাড়ি কাজ করে দিন চলে মর্জিনা বেগমের।

লোহাগড়া উপজেলা সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা খান মর্জিনা বেগমকে মুক্তিযোদ্বা তালিকাভুক্ত করার জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আজও মর্জিনার নাম মুক্তিযোদ্বা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় নাই। লোহাগড়া উপজেলার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বীরাঙ্গনা হিসেবে মর্জিনার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

লোহাগড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব ফকির মফিজুল হক জানান, ‘এতদিনে মর্জিনার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হওয়া উচিৎ ছিল। সে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছে। তাই তাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করার জন্য চেষ্টা করা হবে ।’

(আরএম/এএস/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test