E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আচরণবিধি লঙ্ঘন থামাতে হঠাৎ কঠোর ইসি

২০১৫ ডিসেম্বর ২৪ ১০:০২:৫১
আচরণবিধি লঙ্ঘন থামাতে হঠাৎ কঠোর ইসি

নিউজ ডেস্ক  :পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন থামাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) হঠাৎ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইসির সর্বশেষ নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার থেকে আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দুঃখ প্রকাশ করলেও আর দায়মুক্তি মিলবে না। চিঠি দিয়ে সতর্কও করা হবে না। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেই বিধি অনুযায়ী সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইসির এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে এমন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ সংসদ সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে।

দুই দিন ধরে এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজ করছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ২৭ জনের একটি তালিকা যাচাই-বাছাই চলছিল। তালিকায় কয়েকজন মেয়র পদপ্রার্থীর নামও রয়েছে।

তালিকায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম (সিরাজগঞ্জ-১), ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম (রাজশাহী-৬), তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু (কুষ্টিয়া-২), তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩), সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ (লালমনিরহাট-২), এ কে এম ফজলুল হক (শেরপুর-৩), আবদুর রহমান (ফরিদপুর-১), সোহরাব উদ্দিন (কিশোরগঞ্জ-২), আবদুল কুদ্দুস (নাটোর-৪), এম এ মালেক (ঢাকা-২০), মহীউদ্দীন খান আলমগীর (চাঁদপুর-১), নাহিম রাজ্জাক (শরীয়তপুর-৩), আবু জাহির (হবিগঞ্জ-৩), হাসিবুর রহমান (সিরাজগঞ্জ-৬), আয়শা ফেরদাউস (নোয়াখালী-৬), আবদুর রউফ (কুষ্টিয়া-৪), মমতাজ বেগম (মানিকগঞ্জ-২), দিদারুল আলম (চট্টগ্রাম-৪), নাজমুল হাসান (কিশোরগঞ্জ-৬), আনোয়ারুল আবেদীন খান (ময়মনসিংহ-৯), কবিরুল হক (নড়াইল-১), শওকত হাচানুর রহমান (বরগুনা-২) ও গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২) নাম রয়েছে। তবে ইসি সূত্র জানায়, তালিকা থেকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, শওকত হাচানুর রহমান ও হাসিবুর রহমানের নাম বাদ যেতে পারে।

ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ২০ জন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, বৃহস্পতিবার (আজ) সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে ইসি। তাঁদের বিষয়ে সরাসরি নির্বাচন কমিশন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তালিকাভুক্তদের মধ্যে কয়েকজনকে সতর্ক করার পরও তাঁরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ গতকাল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন থেকে আর কোনো চিঠি নয়। যারাই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করবে, সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত রয়েছেন। বিধি ভঙ্গের বিষয়গুলো তাঁরা দেখভাল করছেন। বিধি ভঙ্গ করলে কাউকে এখন থেকে আর চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে না। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী যেই হোক না কেন, যত বড় ব্যক্তি হোক না কেন, এমপি হোক আর সাধারণ মানুষ হোক, সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন নেওয়া হবে। প্রয়োজনে যে প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে, সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে দেওয়া হবে।

এর আগে এ নির্বাচন কমিশনার মন্ত্রী, এমপিদের আচরণবিধি ভঙ্গের অব্যাহত অভিযোগের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে গতকাল তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু কারো সহযোগিতা চাওয়া মানে অসহায়ত্ব নয়।

নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ আরো বলেন, ‘নির্বাচনের পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদের বিপক্ষে চলে গেছে, এ কথা মোটেও সত্য নয়। এখনো আমাদের কাছে যে রিপোর্ট আছে, দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে; ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় আমাদের দৃষ্টিগোচরে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশও দিচ্ছি।’

এর আগে পৌরসভা নির্বাচনের আচরণবিধি ভেঙে দুঃখ প্রকাশ করায় ক্ষমতাসীন দলের তিন সংসদ সদস্যের অপরাধ মার্জনা করে দায়মুক্তি দেয় ইসি। ওই তিনজন হলেন ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মালেক, নাটোর-২ আসনের মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল ও বরগুনা-২ আসনের শওকত হাচানুর রহমান রিমন। গত সোমবার ইসি এ-সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠায়। তার আগে তথ্য ও ধর্মমন্ত্রীকে একই অপরাধের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা ইসিকে লিখিতভাবে জানান, মন্ত্রীরা আচরণবিধি ভেঙেছেন—তদন্তে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রিটার্নিং অফিসারদের এই বক্তব্য পাওয়ার পর ইসি দুই মন্ত্রীকে দায়মুক্তি দেয়।

তথ্যমন্ত্রী সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ গতকাল বলেন, তাঁর (তথ্যমন্ত্রী) বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

প্রসঙ্গত, পৌর নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপমন্ত্রী বা তাঁদের সমমর্যাদার কোনো সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়ররা নির্বাচনী প্রচার বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। এ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও আছে ইসির।


(ওএস/এস/ডিসেম্বর২৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test