E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় পরাজিত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ফলাফল প্রত্যাখ্যান

২০১৫ ডিসেম্বর ৩১ ১৮:১৫:১৭
সাতক্ষীরায় পরাজিত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ফলাফল প্রত্যাখ্যান

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : দলীয় ও প্রশাসনিক ক্যু করে আমাকে ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে সাতক্ষীরা পৌরসভায় মেয়র পদে  আওয়ামী লীগ দলীয় পরাজিত প্রার্থী শাহাদাত হোসেন বুধবারের ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন।

একই সাথে এই ফলাফল বাতিল ঘোষণা করে পুনঃনির্বাচন দাবি করেছেন তিনি। তার এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী দলের নেতাদের বহিস্কার এবং সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখকে বরখাস্ত করার দাবিও জানান শাহাদাত।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে একথা তুলে ধরেন তিনি।এ সময় তার সাথে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন।
শাহাদাত হোসেন সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী। তিনি চার প্রার্থীর মধ্যে সর্বনিম্ন ৯০৭২ ভোট পেয়েছেন। এই পৌরসভায় বিজয়ী প্রার্থী বিএনপির তাজকিন আহমেদ চিশতি পেয়েছেন ১৬ হাজার ৪৭০ ভোট।

সংবাদ সম্মেলনে শাহাদাত হোসেন বলেন, ভোটের আগের রাতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদ ও সদর থানার ওসি গাড়ি নিয়ে ৩১ টি কেন্দ্রে যেয়ে আওয়ামী লীগের পোস্টার গুলি ছিড়ে ফেলে দেন। তাদের ভাষায় ‘কোথাও নৌকা লেখা থাকবে না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন তারা জানিয়ে দেন প্রয়োজনে গুলি করবো।

এসব কারণে ভোট কেন্দ্রে বেশিরভাগ লোক আসেননি বলে জানান শাহাদাত। তিনি আরও বলেন ভোটের আগের রাত দেড়টায় মাইক্রোবাস নিয়ে ওসি কয়েকজন লোককে সাথে নিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে ত্রাস সৃষ্টি করেন।

এ সময় সাদা পোশাকধারী বেশ কয়েকজন লোককে কেন্দ্রের কক্ষে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারা ব্যালট পেপার নিয়ে নৌকা বাদে ধানের শীষ , লাঙ্গল এবং স্বতš প্রার্থীর অনুকূলে নারকেল গাছে সিল মারেন।শাহাদাত হোসেন এমন কমপক্ষে নয়টি কেন্দ্রের কথা জানান।

তিনি অভিযোগ করে বলেন ইটাগাছাসহ অনেক কেন্দ্রে নৌকা ব্যাজধারীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।কামাননগর কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার ছিড়ে ফেলে নগ্ন ভাষায় গালাগাল করেন একজন পুলিশ অফিসার। কামাননগর মাদ্রাসা কেন্দ্রে তার কর্মী রাজুকে লাঠিপেটা, বাটকেখালি কেন্দ্রে তার কর্মী আবদুল হাকিমকে মারধর করে গালাগাল করার বিস্তর অভিযোগ করে শাহাদাত আরও বলেন সকাল ১১ টায় ইটাগাছা কেন্দ্রে আচরন বিধি লংঘন করে ধানের শীষের লোকজন পুলিশের সামনে প্রচার মিছিল করেছে।

এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে মন্তব্য করে তিনি বলেন ‘আমার দলের নেতাদের সহায়তায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাকে হারানোর জন্য সব ধরনের মেকানিজম করেছিলেন’।তিনি বলেন রাত আড়াইটায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিএনপি দলীয় প্রার্থী তাজকিন আহমেদ চিশতির বাড়িতে যান এবং চিশতি গাড়িতে ওঠেন। এ সময় কেন্দ্রে কেন্দ্রে যেয়ে নৌকার বিরুদ্ধে কথা বলেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে শাহাদাত হোসেন আরও ফিরোজ আহমেদ নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করে লাঙ্গলে ভোট দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। তারা দুজনেই আমার বিরুদ্ধে কাজ করে নৌকাকে হারানোর পরিকল্পনা করেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় নেতা অধ্যাপক আবু আহমেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী মিঠু খানের পক্ষে কাজ করেছেন । তিনি কোনো কোনো স্থানে লাঙ্গলের পক্ষেও ভোট চেয়েছেন।

ভোটের দিনে স্টেডিয়াম কেন্দ্র থেকে তিনটি বাক্স উধাও হবার অভিযোগ করেন তিনি।
শাহাদাত হোসেন আরও বলেন ‘দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম নির্বাচনের ছয়দিন আগে সাতক্ষীরা থেকে চলে যান। তিনি আমার ফোন ধরেন না এবং নির্বাচনে নৌকার পক্ষে তিনি কোনো ক্জা করেন নি’ বলে জানান তিনি।

শাহাদাত বলেন, নজরুল ইসলামের ভাই জামায়াত নেতা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৭/ ১৮ টি হত্যা ও ৭/৮ টি নাশকতার মামলা রয়েছে।তিনি অভিযোগ করেন, যে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সাঈদ মেয়র পদে মনোনয়ন না পেয়ে নির্লজ্জভাবে আমার বিরোধীতা করতে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়েছেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা আতংকিত হয়ে ভোট কেন্দ্রে কম এসেছেন বলে জানান তিনি। ‘আমাকে পরাজিত করানোর জন্য দুই তিনদিন আগে থেকে দলীয় নেতারা হয় লাঙ্গলে না হয় নারকেলগাছে ভোট দেওয়ার আহবান জানান’ বলে অভিযোগ করেন তিনি। জেলা দলের সভাপতি মুনসুর আহমেদ তার পছন্দের লোক মিঠু খানের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন ‘ওসি আমার কাছ থেকে, চিশতির কাছ থেকে, আজহার হোসেনের কাছ থেকে এবং মিঠু খানের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করে নৌকা প্রতীকধারীকে হারিয়ে দেওয়ার নীল নকশা করেছিলেন’ । তিনি ওসি এমদাদ শেখকে বরখাস্ত করার দাবি জানান। একই সাথে মুনসুর আহমেদসহ দলীয় নেতাদের বহিস্কার করার দাবি জানান। এ বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ তিনি কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন বলে জানান শাহাদাত হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি । বলেন ‘বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীক নিয়ে জনগনের সেবার ব্রত নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার দলের নেতাদের বিরোধীতার মুখে তা সম্ভব হলো না’। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন ‘এই পাতানো নির্বাচন মানিনা মানবো না। এর ফলাফল অবিলম্বে বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেওয়া হোক’।

তবে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সভাপতি মুনসুর আহম্মেদ নৌকা প্রতীকের পক্ষে হিন্দু মহল্লা ছাড়াও অন্যত্র শাহাদাৎ হোসেনের পক্ষে কাজ করেছেন এমন বহুৎ প্রমান রয়েছে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ওটা শেষ মুহুর্তে লোক দেখানো।

এ সময় তার সাথে দলের স্থানীয় নেতা মতিয়ার রহমান, আহমেদ হোসেন কচি, আনোয়ারুল ইসলাম রনি, আনোয়ার হোসেন মিলন, কামরুল ইসলাম প্রমুখসহ সাধারন কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদ বলেন, অভিযোগ থাকলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সাতক্ষীরায় থাকাকালিন করা উচিত ছিল। এখন এ ধরণের অভিযোগ দলের কোন নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মানায় না।

(আরকে/এএস/ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test