E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোপালগঞ্জের খোদেজা, রাস্তা থেকে সোজা পৌর অফিস

২০১৬ জানুয়ারি ০২ ১৭:১২:২৫
গোপালগঞ্জের খোদেজা, রাস্তা থেকে সোজা পৌর অফিস

গোপালগঞ্জ থেকে মোজাম্মেল হোসেন মুন্না : গোপালগঞ্জ জেলা শহরের মিয়াপাড়ায় রাস্তা দেখিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ এক মহিলা। মূল রাস্তা থেকে একটি ছোট ভাঙ্গা রাস্তার কিছুটা পেরোলেই একটা ভাঙ্গা দো-চালা টিনের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন এটি তার ঘর। জায়গাটা অন্যের।

তিনি এ ঘরেই স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে থাকেন। ঘরের মধ্যে যেতে গেলে মাথা নিচু করে যেতে হয়। ঘরের মধ্যে খাট বা পালঙ্ক বলে কিছু নাই। একটি মাদুর পেতে রাখা হয়েছে। রান্নাঘর বলতে একটি খুপড়ি ঘর। তার মধ্যেই চলে রান্না-বান্নার কাজ। এমন দারিদ্রতার মধ্য দিয়েই চলে জীবন। হ্যাঁ, এতক্ষণ বলছিলাম খোদেজা বেগমের কথা। যাকে এলাকার লোক খোদে বু নামেই চেনে বা জানে। এলাকার সকলের সুখ-দুঃখে যাকে সব সময় মানুষ কাছে পায়।

হয়তো কাউকে তিনি টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে পারেননা। তবে তিনি শ্রম দিয়ে এতদিন এলাকার লোকের পাশে থেকেছেন। সে পাশে থাকাটা ২/৪ বছরের নয়। ২৫/২৬ টি বছর এভাবে তিনি কোন কিছুর বিনিময়ে শ্রম দেননি। এলাকার লোকদেরকে ভালো লেগেছে বলেই তিনি এভাবে শ্রম দিয়ে গেছেন। স্বামী গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ হোস্টেলের বাবুর্চী।

একদিকে, যেমন তিনি জনগণের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন, আবার স্বামীর কাজেও তিনি সহায়তা করেছেন। কলেজ হোস্টেলে গিয়ে তিনি স্বামীর সাথে কাজ করেছেন। অভাবের সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে তিনি বাড়ির সামনে একটি চায়ের দোকানও করেছিলেন। সংসার সামলানোর পাশাপাশি স্বামীকে তার কাজে সহায়তা, চায়ের দোকান চালানোসহ কাজে ব্যস্ততা থাকলেও জনগণের পাশে দাঁড়াতে তিনি কখনোই পিছপা হননি। এমনকি গভীর রাতে নিজে ভ্যান গাড়ি চালিয়ে গরিব অসুস্থ গর্ভবতীকে হাসপাতালে নিয়েও গেছেন তিনি। এমন অনেক ভালো কাজের নজির আছে এ মহিলার বললেন এলাকাবাসী।

সেই খোদে বু অর্থাৎ খোদেজা বেগমকে কিন্তু তার কাজের মজুরী এবারের পৌর নির্বাচনে এলাকার লোকজন দিয়ে দিয়েছে। এলাকার কিছু লোকজন পৌর নির্বাচনের আগে এই নারীকে তার কাজের পুরস্কার হিসাবে তাকে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ( ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড) দাঁড় করিয়ে দেয়। নির্বাচনে তার টাকা খরচ করবার কোন দরকারই হয়নি। ছোট-খাট যেসব খরচ তা এলাকার লোকজনই করেছে। তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভও করেছেন। তার এ জয়লাভে তিনি বা তার পরিবার যতটানা খুশি হয়েছেন তার থেকে এলাকার সাধারণ লোকজন বেশী খুশি হয়েছেন। আগে তারা খোদে বু-কে সব সময় কাছে পেয়েছেন। তার পুরস্কার হিসাবে এবার ভোটাররা তাকে কাউন্সিলর বানিয়েও দিয়েছেন। তিনি জয় লাভ করার পর তার ভাঙ্গা বাড়িতে যে বা যারা দেখা করতে এসেছেন তারাই মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। এমনকি তার বিজয়ে এলাকার অনেকেই বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।

নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর খোদেজা বেগম বললেন, তিনি আগেও যেভাবে জনগণের কাছে ছিলেন আগামী দিন গুলোতেও তিনি সবার পাশে থাকবেন। তবে এখন তার দায়িত্ব আরো অনেক বেড়ে গেছে। তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করে বলেন, জনগণ তাকে যে মর্যাদা দিয়েছেন তিনি তার সব টুকুরই সদ্ব্যবহার করবেন।

তিনি বলেন, তার প্রথম কাজ হবে এলাকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নসহ যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে তা এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে সমাধান করা। পাশাপাশি তিনি এলাকার নারী নির্যাতন বন্ধের জন্য কাজ করবেন। বিশেষ করে বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য তিনি ভূমিকা রাখবেন। তিনি নিজে মাত্র ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠি যাতে তাদের সন্তানদের ঠিকমতো স্কুলে পাঠায় সে ব্যাপারেও তিনি কাজ করবেন বলে জানান এই মহিলা কাউন্সিলর।

এলাকার বাসিন্দা এ্যাডভোকেট সরদার মোঃ মহব্বত আলি জানান, অনেক ভিআইপিকে জনপ্রতিনিধি করার পর তারা জনগণের ফোনের উত্তরও দেননা। এবার তাই তারা সাধারণ এক মহিলাকে বিপুল পরিমান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। যে মহিলা বিনা স্বার্থে এত বছর মানুষের উপকারে এসেছেন, জনগণের পাশে থেকেছেন। তাকে কাউন্সিলর বানাতে পেরে এলাকার লোকজন খুশি। কেনানা যে বা যারা জনগণের পাশে থাকেন তাকেই জনগণের প্রতিনিধি বানানো উচিৎ।

এলাকার যুবক মোহসীন উদ্দিন সিকদার জানান, তিনি নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ। তাকে জনগণ যোগ্য সম্মানই দিয়েছেন।

একই পাড়ার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান সিকদার জানান, খোদেজা বেগমের নির্বাচন তারা বিনা পয়সায় করেছেন । এলাকার সবাই মিলে তার নির্বাচন চালিয়েছেন। এমন একজন ভালো মানুষের পক্ষে নির্বাচন করতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন।

(এমএইচএম/এএস/জানুয়ারি ০২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test