E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

করোনা : আক্রান্ত কোটি ছুঁই ছুঁই, মৃত ছাড়াল ৪ লাখ ৮০ হাজার

২০২০ জুন ২৪ ১৭:৩০:৪৯
করোনা : আক্রান্ত কোটি ছুঁই ছুঁই, মৃত ছাড়াল ৪ লাখ ৮০ হাজার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউরোপ এবং আমেরিকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে বর্তমানে এশিয়া, উত্তর আমেরিকা এবং আফ্রিকা হয়ে উঠছে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন উপকেন্দ্র। প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা এই ভাইরাস গত এক মাসে আরও বেশি বিস্তার ঘটিয়ে কেড়েছে লাখো মানুষের প্রাণ।

করোনাভাইরাসের দৈনিক হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভাইরাসটি গত ডিসেম্বরে চীনে উৎপত্তি হওয়ার পর গত এক মাসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটিয়েছে।

গত ২৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো বিশ্বে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ অতিক্রম করে; ওইদিন বিশ্বজুড়ে করোনা রোগী শনাক্ত হন এক লাখ ২ হাজার ১৮০ জন এবং মারা যান ৬ হাজার ৪২২ জন।

তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই নতুন আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ৯০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষ। কোনও কোনও দিন সেই সংখ্যাও ছাড়িয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত করোনায় একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে গত ১৯ জুন; ওইদিন আক্রান্ত হন ১ লাখ ৮২ হাজার ২০২ জন।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটেছে একদিন আগে অর্থাৎ ২৩ জুন; আক্রান্তদের তালিকায় যুক্ত হন আরও এক লাখ ৬২ হাজার ৯৯৪ জন। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় কোটির ঘরে পৌঁছাতে যাচ্ছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বুধবার বিকেল ৪টা) বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ লাখ ৭৭ হাজার ১২৬ জন।

ওয়ার্ল্ডওমিটারের হিসাবে করোনায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ মারা গেছে এপ্রিলে। ২ এপ্রিল বিশ্বে রেকর্ড ৬ হাজার ২৭৩ জন মারা যান। তারপর থেকে প্রতিদিনই প্রায় এই সংখ্যা বেড়েছে, ভেঙেছে আগের রেকর্ড। ৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতো একদিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮৯৭ জনের প্রাণ কাড়ে করোনা।

তবে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ মারা গেছে ১৭ এপ্রিল; ওইদিন বিশ্বজুড়ে প্রাণহানি ঘটে ৮ হাজার ৪৩৫ জনের। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিশ্বজুড়ে করোনায় প্রাণহানির তালিকায় যুক্ত হয়েছেন গড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মানুষ।

জুন মাসের প্রায় প্রতিদিনই পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ মারা গেছে। তবে এই মাসে একদিনে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ১৬ জুন; ওইদিন বিশ্বে করোনায় প্রাণ হারান ৬ হাজার ৫৯৯ জন। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বুধবার বিকেল ৪টা) বিশ্বে করোনায় মারা গেছেন ৪ লাখ ৮০ হাজার ২২০ জন।

এপ্রিল থেকে মে মাসের দিকে করোনার উপকেন্দ্র ইউরোপ এবং আমেরিকা হয়ে উঠলেও বর্তমানে সেই জায়গা দখল করেছে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকা। গত ২৪ ঘণ্টায় ইউরোপে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭২৪ জন। কিন্তু উত্তর আমেরিকায় এই সংখ্যা ৪৩ হাজার ৮৬৭, দক্ষিণ আমেরিকায় ৫৪ হাজার ৩৭৫, এশিয়ায় ৪১ হাজার এবিং আফ্রিকায় ৯ হাজার ১৪৩ জন।

বর্তমানে এশিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৯২১ জন। এই মহাদেশে করোনায় মৃত্যু অর্ধলাখ (৫০ হাজার ২৩৬ জন) ছাড়িয়েছে বুধবার। এশিয়ায় করোনা আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে ভারত; দেশটিতে সংক্রমিত হয়েছেন ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৬২১ জন। মৃত্যুতেও এশিয়ায় সবার ওপরে রয়েছে ভারত; ১৪ হাজার ৫০০ জন। এশিয়ায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুতে ভারতের পরই আছে ইরান। দেশটিতে করোনায় প্রাণ গেছে ৯ হাজার ৮৬৩ এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৯ হাজার ৯৭০ জন।

এই অঞ্চলে তুরস্ক, পাকিস্তান, সৌদি আরবের পরে ৬ নম্বরে আছে বাংলাদেশ; এখানে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন এক হাজার ৫৮২ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ৬৬০ জন।

উত্তর আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ লাখ ২১ হাজার ১৩৩ এবং মারা গেছেন এক লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৮ জন। এই অঞ্চলে সর্বাধিক আক্রান্ত (২৪ লাখ ২৪ হাজার হাজার ৪৯৩ জন এবং মৃত ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৭৬ জন) যুক্তরাষ্ট্রে।

দক্ষিণ আমেরিকায় প্রাণঘাতী করোনায় সংক্রমণ বাড়ছে আগের চেয়ে। এই অঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত কিছু দেশে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৭১ হাজার ৪৮৮ এবং মারা গেছেন ৭৪ হাজার ৩৮৪ জন।

আফ্রিকা মহাদেশে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার এবং মারা গেছে ৮ হাজার ৬৫৩ জন। এই অঞ্চলে আক্রান্তে শীর্ষে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা; দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ ৬ হাজার ১০৮ এবং মারা গেছেন ২ হাজার ১০২ জন। এরপরই আক্রান্ত এবং মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে মিসর, নাইজেরিয়া এবং ঘানা।

ভ্যাকসিনের খবর

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের অন্তত এক ডজন ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া আরও শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিনই এখন পর্যন্ত ব্যাপক পরিসরে পরীক্ষা উতড়ে যেতে পারেনি।

কোনও ভ্যাকসিনের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেতে হলে শেষ অর্থাৎ তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হতে হবে। চীনের বিজ্ঞানীদের তৈরি অন্তত ছয়টি সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।

গত শনিবার চাইনিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি (আইএমবিসিএএমএস) তাদের তৈরি একটি ভ্যাকসিন দ্বিতীয় দফায় মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। আইএমবিসিএএমএসের এই ভ্যাকসিনটি চীনের তৈরি ছয়টি ভ্যাকসিনের একটি।

মঙ্গলবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি শূকরের দেহে পরীক্ষায় আশাব্যঞ্জক সাফল্য দেখিয়েছে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরিকৃত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনটি শূকরের দেহে এক ডোজের পরিবর্তে দুই ডোজ প্রয়োগ করায় তাতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে। রয়টার্স, ওয়ার্ল্ডওমিটার।

(ওএস/এসপি/জুন ২৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test