নিতাই সাহা, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিঘর ইউনিয়নের নাগেরগাতি গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুদুর রহমান লাদেন (১৩)।

জন্ম থেকেই তার দুই হাত কনুই থেকে নেই। ধমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে ৬ বছর বয়সেই নাগেরগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পিএসসির পাবলিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৩ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হয় মাসুদ। এর পর দারিদ্রতার কষাঘাত টেলে ভর্তি হন অনিবার্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে।

এ বছর জেএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে মাসুদুর রহমান লাদেন যাকে এলাকার সবাই অদম্য মেধাবী ছাত্র হিসেবে চিনে সবাই তাকে আদর করে। এবার উপজেলার গুজিরকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট(জেএসসি)পরীক্ষায় ডান হাতের কনুই এর উপরে কলম ঝুলিয়ে মুখের ডান গালের সাথে ভর করে চাপ দিয়ে লিখে অংশ নিচ্ছে মাসুদুর রহমান লাদেন।

তার বাবা সাহেব আলী একজন দিনমজুর ও বর্গাচাষী। মা হামিদা বেগম গৃহিনী। মাসুদুর রহমান ৩ভাই,৩বোন এর মধ্যে সে সবার ছোট। মাসুদুর রহমানের মা হামিদা খাতুন বলেন, শিশুকাল থেকেই মাসুদুর রহমান লেখাপড়ার প্রতি খুব ঝোঁক। অনেক কষ্টে,এই অচল ছেলেকে পড়াশুনা করাচ্ছি।

অনিবার্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক ভাদুরী বলেন, মাসুদুর রহমান লাদেন লেখাপড়ার প্রতি অনেক মনোযোগ ও মেধাবী বটে। এ ধরনের মেধাবী শারীরিক প্রতিবন্ধী গরীব শিক্ষার্থীদের সাহায্য সহযোগীতার জন্যে এগিয়ে আসা উচিত। উপযুক্ত স্পন্সর পেলে অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ সমাজে প্রতিষ্টিত হবে । এরা দেশের সম্পদ হিসেবে পরিনত হবে। দেশের সেবায় ওদের মেধা কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে।

গুজিরকোনা পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা (ভার:) দৌলতউল্লাহ মুরাদ সাংবাদিকদের বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুদুর রহমান লাদেন পরীক্ষা কেন্দ্রে কারও সহযোগিতা ছাড়াই জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তার যে লেখার স্টাইল অত্যন্ত সুন্দর। তার মেধাকে কাজে লাগাতে পারলে জাতি সমাজ গঠনে অনেকটা সহায়ক হবে। তার জন্য বরাদ্ধ বাড়তি ২০মিনিট সময় ছাড়াই বাংলা ২ঘন্টার পরীক্ষা শেষ করে ফেলেন ।

গুজিরকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব প্রধান শিক্ষাক সুধন চন্দ্র সরকার বলেন, মাসুদুর রহমান অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। তার সুনাম বয়ে উঠুক এবং সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার জন্যে আমি সরকার ও দাতা সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্বক সহযোগিতা কামনা করছি।

(এনএস/এসপি/নভেম্বর ০৭, ২০১৭)