খুরশিদ আলম শাওন, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) : মা ও মা তোমাকে যে খুব ছুঁতে ইচ্ছে করছে। একটু এ পাশে আসো না। মেয়ের এমন আকুতি শুনে মায়ের মনটিও কাদঁছিলো তবে বাধ সাধে ঐ কাটাতারের বেড়া। মা মেয়ে কেউ কাউকে ছুয়ে দেখতে পারছে না। কারণ মা মেয়ের মাঝখানে রয়েছে প্রায় ১০ ফিটের দুরত্বের কাটা তারের বেড়া। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল কোচল ও হরিপুর উপজেলার চাপসা সীমান্তে গতকাল শুক্রবার ভারত ও বাংলাদেশের  মানুষের মিলন মেলায় মা মেয়ের ছুয়ে দেখার হৃদয় বিদারক ঘটনাটি কাছ থেকে দেখে এ প্রতিবেদক। 

মেয়ে মিনতি রানী পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলা থেকে আর মা ভারতের আসাম থেকে । মেয়ের বাংলাদেশে বিয়ে দিয়েছে প্রায় ১৫ বছর। মা মেয়ের দেখা প্রায় এই সময়ে হয়ে থাকে। তবে সেটা দেখা হয় আর খোজ খবর নেওয়া হয় মাত্র কিন্তু মা মেয়ের এক সাথে হওয়ার সুযোগ হয় না।

এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়,প্রতি বছর পাথর কালীর মেলা বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে এই সাক্ষাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সাক্ষাতে দুই পারের আত্বীয় স্বজনদের কাঁটাতারের বেড়া তাদের আলাদা করে রাখলেও আবেগ পৌঁছে যায় সীমান্ত পেড়িয়ে। জানা যায়, বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর এবং ভারতে কোচবিহার, আসাম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কলকাতা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাই সাইকেল, অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস, মিনিবাস যোগে মেলা স্থলে আসেন লাখো মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, ভোর থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা সীমান্তে আসেন। দির্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হবার এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না কেউ। প্রতি বছর দু’দেশের স্বজনদের এ মিলন মেলা এখানে জন্ম দেয় এক বিরল দৃশ্যের। হাজার হাজার মানুষ কথা বলেছে এই দিনে তাদের স্বজনদের সাথে।

দু’দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা সাধারণ মানুষ টাকা পয়সার অভাবে পাসপোর্ট ভিসা করতে পারেন না তারা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে। সারা বছর দুই দেশের মানুষ অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আগে থেকেই জানিয়ে দেয় স্বজনরা। কে কোথায় দেখা করবে। ভারতীয় অধিবাসীরা কাঁটাতারের পাশে এলে সেখানে বাংলাদেশেরও লাখো নারী পুরুষ সমবেত হয়। মল্লিকা রানী ভারতীয় সীমান্তে ও শ্বাশুড়ী টেপা রানী বাংলাদেশ সীমান্তে। নাতী নাতনি সবাই সবার সাথে কথা বলছে কান্নাজড়িত কন্ঠে ।

টেপা রাণী বলেন, ৬ বছর পর জামাই ও মেয়ের দেখা পেলাম একে অপরকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা থাকলেও পারছিনা। বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া। ইচ্ছে হচ্ছিল একটু ছুঁয়ে দেখার কিন্তু ছুতে পারিনি। জড়িয়ে একটু চিৎকার করে কান্না করি তবে হয়তো দির্ঘদিনের জমে থাকা কষ্টগুলো থেকে একটু রেহাই পেতাম বলছিলেন ভারতের মাকড় হাটে থাকা ছোট খালা জোসনাকে দেখতে আসা ফুলবাড়ির রফিকুল ইসলাম।

পাথর কালীর মেলার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নগেন কুমার পাল জানান, কৃষকের ধান মাঠে থাকার কারনে এক সপ্তাহ পিছিয়ে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

(কেএএস/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০১৭)