স্টাফ রিপোর্টার : আবাসন মেলায় বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ক্রয়ে সহজ শর্তে ঋণ মিলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি)। এর বাইরে মেলায় বিএইচবিএফসি ছাড়াও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকসহ অংশ নেয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। অনেকে মেলা উপলক্ষে দিচ্ছে বিশেষ উপহারও।

সোমবার মেলার শেষ দিনে তাই অনেকে এসব ঋণ সুবিধা নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই এসব স্টলে ভিড় বেশি দেখা যায়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সস্মেলন কেন্দ্রে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী এই আবাসন মেলা ঘুরে দেখা যায়, দেশের আবাসন খাত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং নির্মাণ উপকরণ ও সরঞ্জাম বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলা উপলক্ষে ঘরবাড়ি তৈরিতে সাড়ে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে বিএইচবিএফসি। এ করপোরেশনের প্রিন্সিপল অফিসার আওলাদ হোসেন বলেন, আমরা আবাসন মেরামত, ফ্ল্যাট ক্রয়, বাড়ি নির্মাণসহ গ্রাহকদের ৬ ধরনের সুবিধাতে ঋণ দিয়ে থাকি। সাড়ে ৮ শতাংশ সুদে গ্রাহকরা এ ঋণ নিতে পারবেন।

আওলাদ হোসেন বলেন, আমাদের এ সেবা আগে মহানগর ও পৌরসভার মধ্যে ছিল, এখন গ্রাম পর্যন্ত চলে গেছে। পল্লীমা নামে পল্লী আবাসন ঋণ কর্মসূচি চালু করছে কর্পোরেশন। তিনি আরও জানান, সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বিশেষ করে ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ২০৪০ বাস্তবায়নের পল্লী অঞ্চল জনসাধারণের অবাসন সুবিধা নিশ্চিতের জন্য পল্লী আবাসন ঋণ কর্মসূচি চালু করেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা এবং অন্যান্য বিভাগীয় জেলা সদর এলাকা বাদে সকল নাগরিক ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া কর্পোরেশনের আরও সেবার মধ্যে রয়েছে নগরবন্ধু নামে একটা সেবা। এটা শুধুমাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার নাগরিকরা পাবেন।

বিএইচবিএফসির আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. মাইদুল হক বলেন, এবারই প্রথম আবাসন মেলায় অংশ নিয়েছেন তারা। ঋণ গ্রহীতাদের ভালো সাড়া পাচ্ছেন। মাত্র ৯ শতাংশ সুদে মেলায় ঋণ দিচ্ছে তাদের প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, মেলা থেকে সহজে গ্রাহকরা ঋণের জন্য প্রক্রিয়া করতে পারছেন। মেলায় ঋণের প্রসেসিং ফিতে ৫০ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে।

মাইদুল হক বলেন, শুধু ফ্ল্যাট ও প্লটের জন্য ঋণ নয়, মেলায় এগুলো নিবন্ধন করতে আলাদা ঋণ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেকেই ফ্ল্যাট ও প্লট কিনে টাকার অভাবে নিবন্ধন করতে পারেন না। এ জন্য নিবন্ধনের জন্য ১৫ বছর মেয়াদে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্টলে ঋণের খোঁজখবর নিচ্ছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। মেলায় আসা ক্রেতাদের মধ্যে ফ্ল্যাট ও প্লটের নকশা দেখার পাশাপাশি ঋণ নেয়ার আগ্রহও রয়েছে অনেকের।

মেলায় সাড়ে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ওই স্টলে থাকা কর্মকর্তারা জানান, মেলা থেকে ঋণ প্রক্রিয়া করলে ৬২ শতাংশ ফি নেওয়া হচ্ছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান বলেন, তাদের ব্যাংক ৮ দশমিক ৭ শতাংশ সুদে গৃহঋণ দিচ্ছে। এই ঋণের জন্য নামমাত্র প্রক্রিয়াকরণ ফি নেওয়া হবে। তাদের ব্যাংক সর্বোচ্চ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে। ফ্ল্যাটের দামের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন গ্রাহকরা।

ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা গ্রহীতার বয়সের ওপর নির্ভর করবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ বছরে কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ আছে।

এবার মেলায় ক্রেতাদের সাড়া অন্য সব বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ফ্ল্যাট কেনাবেচা হয়েছে বলে জানান ডম-ইনোর বিক্রয় বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ-আল-মামুন। তিনি বলেন, ঋণের সুদ কম থাকায় মধ্যম আয়ের মানুষ ফ্ল্যাট কিনতে বেশি আসছেন। তাছাড়া যারা ডম-ইনোর ফ্ল্যাট কিনছেন তাদের ঋণের ব্যবস্থা তারা করে দিচ্ছেন। এ সুবিধা পাওয়ায় ফ্ল্যাট কেনায় আরও বেশি আগ্রাহী হচ্ছেন ক্রেতারা।

মামুন বলেন, ফ্ল্যাটের কেনাবেচা বৃদ্ধিতে দামও বেড়েছে। আগে ধানমণ্ডি এলাকায় ৬ হাজার টাকা বর্গফুটে ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। এখন তা বেড়ে ৭ হাজার টাকা হয়েছে।

আমিন মোহাম্মদ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েটসের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, মেলায় কম সুদে ঋণ সুবিধা থাকায় ক্রেতারা বেশ আগ্রহ নিয়ে আসছেন। শেয়ার বাজারে উত্থান-পতন, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে আমানতে সুদ কম থাকায় মানুষ তেমন লাভ পাচ্ছেন না। এ কারণে অনেকে এখন আবাসনে বিনিয়োগ করছেন। এতে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মেলায় ক্রেতা সমাগম বেশি হয়েছে। কেনাবেচা বাড়তে থাকায় দামও কিছুটা বেড়েছে।

এবার মেলায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ফ্ল্যাট বা প্লট বুকিংয়ে বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার ও বিশেষ ছাড়ের অফার রয়েছে। ছাড় ও অফারের কারণে বেচাকেনায় গতি পেয়েছে। এসব সুবিধা নিতে গতকাল ছুটির দিন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল।

মেলাতে ঘুরতে আসা মুহাম্মদপুরের বাসিন্দা সিদ্দিক রহমান জানান, গ্রামীণ মানুষের বাড়ি তৈরির জন্য যে ঋণ ব্যবস্থা করছে এটা খুব ভালো উদ্যেগ।

রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনসহ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় স্টল দেয়ায় ক্রেতা বেশি আসছেন। এখানে অবকাশের জন্য ঘুরতে আসছেন না দর্শনার্থীরা। স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পাওয়ায় তাদের আগ্রহ বেড়েছে। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষ বেশি আসছে। তাদের ঋণ দিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এগিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, ঋণ সুবিধায় যেমন কেনাবেচা বেড়েছে তেমনি এলাকাভেদে ফ্ল্যাট ও প্লটের দামও ২ থেকে ৫ শতাংশ বেড়েছে।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭)