মৃণাল সরকার মিলু : আইন বিভাগের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত রুপার পরিবার। রায়ে খুশি সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও এলাকার সাধারণ মানুষ। 

সোমবার টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবু মনসুর মিয়া পাঁচ আসামির চার জনের ফাঁসি, একজনের সাত বছর কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে রুপাকে যে বাসের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় সেই বাসটির নাম পরিবর্তন করে রুপার পরিবারকে দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রুপার মা হাছনাহেনা বানু বলেন, অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়ায় তিনি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত তিনি জায়নামাজে বসেছিলেন। রায় শোনার পরই তিনি নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করেন।

তিনি বলেন, মেয়ের আত্মার শান্তি কামনায় তিনি রোজাও রেখেছেন। এখন সরকারের কাছে তার একটাই দাবী রায় যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। তিনি যেন মৃত্যুর আগে আসামীদের রায় কার্যকর দেখে যেতে পারেন।

কান্নাজড়িত কন্ঠে মেয়ের স্মৃতিচারিত করে বলেন, মেয়ে বলত ও পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের দায়িত্ব নেবে। মা আর ভাই-বোনদের জন্য সবকিছু করার প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করত। মেয়েকে নিয়ে কত যে আশা ছিল, কত যে স্বপ্ন ছিল তা আর পূরণ হলোনা। পাঁচ ধর্ষক ও হত্যাকারী তা পূরণ হতে দেয়নি।

তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ রুপাধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে সরব দেশবাসীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।

রুপার ছোট বোন পপি বলেন, দুইবোন ছিলাম জোড়া কবুতরের মত। ডানা মেলে উড়তে পারতামনা ঠিকই। তবে মনের আকাশে একসঙ্গে পাখা মেলে ঘুরতাম। পরিবারের সীমাহীন দৈন্যতা থাকার পরও দু’বোনে মিলে আনন্দ আর হই হুল্লুরে মেতে থাকতাম। ভাবতে অবাক লাগে, এখন সেগুলো শুধুই স্মৃতি।

রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, দেশে এই প্রথম কোন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামীদের সাত মাসে বিচারের রায় হলো। তবে উচ্চ আদালতে আপিল করে ফাঁসির চার আসামী ও সাজা প্রাপ্ত একজন যাতে ছাড়া না পায়, অথবা কোনো ধরনের প্রভাব খাটিয়ে আসামিরা যাতে বের হয়ে যেতে না পারে এ জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ম.ম আমজাদ হোসেন মিলন বলেন, রুপার হত্যার রায়ের মাধ্যমে প্রমান হয়েছে অপরাধ করে রেহাই পাবে না। দৃষ্টান্তমুলক রায় দেখে সমাজের বখাটে ও অসৎ ব্যক্তিরা ভয়ে অপরাধ কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সকলের অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।

(এমএসএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮)