ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সাত উপজেলায় ১১৪টি শাখা ডাকঘর আছে। এই ডাকঘরে তিনটি পোস্টের বিপরীতে অনেক স্থানে তিনজন আবার অনেক স্থানে দুজন কাজ করছেন।

স্বল্প সম্মানীতেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন।ডাক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে শাখা ডাকঘরের একজন পোস্টমাস্টারের বেতন ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করা হয়। এরপর ১৯৮০ সালে ৬৮ শতাংশ, ১৯৮১ সালে ৬৪ শতাংশ, ১৯৮২ সালে ৩০ শতাংশ, ১৯৮৪ সালে ২০ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ৫০.৮৮ শতাংশ, ১৯৯৫ সালে ২০ শতাংশ, ১৯৯৯ সালে ২০ শতাংশ, ২০০৪ সালে ১০ শতাংশ, ২০১০ সালে ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ২০১৩ সালে ২৫ শতাংশ বাড়ানোর পর থেকে একজন পোস্টমাস্টার মাসিক ১ হাজার ২৬০ টাকা, পোস্টম্যান এক হাজার ২৩০ টাকা ও রানার ১ হাজার ১৮০ টাকা করে পেয়ে আসছিলেন।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে শতভাগ বাড়ানোর পর থেকে একজন পোস্টমাস্টার ২ হাজার ৫২০ টাকা, পোস্টম্যান ২ হাজার ৪৬০ টাকা ও রানার ২ হাজার ৩৬০ টাকা করে পাচ্ছেন।

পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব গোপীনাথপুর শাখা ডাকঘরের পোস্টম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সারা দিন মানুষের বাড়ি ঘুরে চিঠি বিলি করতে হয়। দিনের পর রাতেও কাজ করতে হয়। দিনভর এত পরিশ্রমের পর যা সম্মানী দেওয়া হচ্ছে তা দিয়ে সংসার চলে না। ফলে ধারদেনার পরিমাণ বেশি হচ্ছে।’

সাদুল্যাপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের মহিষবান্দি শাখা ডাকঘরের রানার মশিউর রহমান বলেন, ‘আমার এই কাজ করার ১৮ বছর হয়ে গেছে। কিছু সম্মানী ছাড়া অন্য কোনো সুবিধা পাইনি। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলের খরচ দিতে না পারায় সে পড়ালেখা করতে পারেনি। ছোট ছেলেটা দশম শ্রেণীতে পড়ছে। সংসারে খরচ করে তারও পড়ালেখার খরচ দিতে হিমশিম খাচ্ছি।’

বাংলাদেশ অবিভাগীয় ডাক কর্মচারী পরিষদ গাইবান্ধা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুকুমার চন্দ্র মোদক বলেন, ‘ডাক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে হলে তাড়াতাড়ি এর উন্নয়ন করতে হবে। আমরা সরকারি সকল কাজ করলেও আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি।’ তাই শাখা পোস্টমাস্টার, পোস্টম্যান ও রানারদের চাকরি জাতীয়করণ, ডাক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও রেশন ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ অবিভাগীয় ডাক কর্মচারী পরিষদের গাইবান্ধা জেলা শাখার উপদেষ্টা গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ডাক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে ডাক বিভাগ ও কর্মচারীদের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা উপবিভাগ পোস্টঅফিস পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শাখা ডাকঘরে কর্মরতদের মাসিক সম্মানী দেয় সরকার। তাদের পরিশ্রমের তুলনায় সম্মানী খুব কম। সরকার ভর্তুকি দিয়ে ডাকঘরগুলো এখনো পরিচালনা করছে।’

(এসআইআর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮)