বংশালে বিপুল পরিমান নকল প্রসাধনী জব্দ
স্টাফ রিপোর্টার : বিপুল পরিমাণ নকল ও ভেজাল প্রসাধন সামগ্রী জব্দ করেছে র্যাব-১০। রাজধানীর বংশাল থানার মালিটোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৮টি গুদাম থেকে এসব সামগ্রী জব্দসহ ছয়জনকে আটক করা হয়।
এদের মধ্যে মূল হোতা দুই ভাই আনোয়ার ও সানোয়ার ভেজাল প্রসাধনী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক। অন্য চারজন হচ্ছে কর্মচারি। ম্যাজিস্ট্রেট দুই ভাইকে দুই বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করেছেন।
র্যাব-১০ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৫ মালিটোলার ময়না হাজি নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালায়। ছয় তলার এই বাড়িটি প্রসাধনী তৈরীর কারখানা ও গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কারখানা বলতে আসলে ঘরে বসে পুরনো ও খালি কনটেইনারে নকল প্রসাধনী ভরে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটের দোকানে সরবরাহ করা হতো।
সারা দেশ থেকে বিভিন্ন রকম প্রসাধন সামগ্রীর পুরোনো ও ব্যবহৃত খালি কনটেইনার ফেরিওয়ালার মাধ্যমে সংগ্রহ করে ওই বাড়িতে এনে রাখা হতো। ভবনের বিভিন্ন কক্ষ তারা গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করত। এরকম ১৮টি কক্ষ গুদাম হিসেবে ব্যবহার করত তারা। এসব গুদাম থেকে জব্দকৃত সামগ্রী হবে ১০ ট্রাক সমপরিমাণ।
ভবনের কোনো কক্ষে প্যাকেটিং, কোনো রুমে পলিশিং এবং কোনো রুমে বিক্রির কাজ চলত। এখানে তৈরি হতো বিশ্বের দামি ব্রা-গুলোর মধ্যে ডাভ শ্যাম্পু, সানসিল্ক, প্যারাসুট, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, জিলেট, নিভিয়া, হেড অ্যান্ড শোল্ডার, পেন্টিন, ভাটিকা, জনসন, ভ্যাসলিন, ফক্স, রেক্স, বস, ক্লিয়ার এবং বিশ্বের এক নম্বর ব্র্যান্ড ‘সিকে ইন টু ইউ’। এ ছাড়া আরো নামী-দামি প্রায় ৩০টির মতো পণ্য পাওয়া যায়।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা গণমাধ্যমকে জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা খালি কৌটাগুলোতে নকল প্রসাধনী ভরে বাজারে সরবরাহ করা হতো। ব্যবহৃত খালি কৌটাগুলো বিভিন্ন উপায়ে সংগ্রহ করত তারা।
তিনি আরো জানান, নামি-দামি এসব কৌটার মধ্যে নিম্ন মানের সেন্ট ও স্পিরিট ব্যবহার করা হত। এরা নিজেরাই বিভিন্ন স্টিকারও তৈরি করত।
ইতিমধ্যে যেসব দোকানে তাদের নকল প্রসাধনী সরবরাহ করা হয়েছে, সেসব দোকান থেকে উঠিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জব্দ করা ভেজাল প্রসাধনী আদালতের মাধ্যমে ধ্বংস করা হবে বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট।
এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারের পর খালি কনটেইনার বা বোতল ভেঙ্গে ফেলতে নস্ট করে ফেলার আহবান জানিয়েছেন।
সাজাপ্রাপ্ত আনোয়ার ও সানোয়ার জানান, প্রত্যেক সেন্টের খালি কৌটা তিন টাকা, বড় শ্যাম্পুর কৌটা পাঁচ টাকা ও অপেক্ষাকৃত ছোট কৌটাগুলো দুই টাকায় ক্রয় করত তারা। বিভিন্ন এজেন্ট তাদের কাছে এসব কৌটা পৌঁছে দিত। এসব খালি কৌটায় নকল প্রসাধনী ভরে চকবাজার, গুলিস্তান, মতিঝিল, নিউ মার্কেট, ফার্মগেট, মিরপুর ১০ নম্বও, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করত।
গত আট বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে তারা জানান। মাদারীপুর সদরের তিতির পাড়া এলাকায় তাদের বাড়ি।
ময়না হাজির ওই বাড়ি তারা ভাড়া নিয়েছে এক লাখ টাকায়। এর আগে তারা নিজেরাই খালি কৌটা সাপ্লাইয়ের কাজে জড়িত ছিলো।
তারা আরো জানান, গত তত্তাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে র্যাব-১০ একবার অভিযান চালিয়েছিলো। তখন শুধু খালি কৌটা হওয়ায় তাদের কিছু করেননি। তবে র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট এ কথা অস্বীকার করেন।
অভিযানে র্যাব-১০ এর লালবাগ বিভাগের ফ্লাইট ক্যাপ্টেন কাওসার আজম ও কেরানীগঞ্জের কোম্পানি কমান্ডার মেজর শামীম আহমেদ অংশগ্রহন করেন। তাছাড়া র্যাবের বিপুল সংখ্যক সদস্য অংশ নেন।
(ওএস/এস/জুলাই ০৮, ২০১৪)