ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ৯০ এর দশকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আয়কর অফিসে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে পিয়নের কাজ করতেন মাসুদুর রহমান। সেই ‘পিয়ন’ মাসুদের হাতে এখন আলাদিনের চেরাগ! পিয়ন থেকে শিল্পপতি বনে যাওয়া মাসুদ এখন প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক। অবশ্য তার এ বিস্ময়কর উত্থানের গল্প কয়েক বছর আগে একটি জাতীয় পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিল। তবে মাসুদ এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে।

নিজেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত সৈনিক’ দাবি করলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ‘হাওয়া ভবনের’ সিন্ডিকেটের সঙ্গে মাসুদ সক্রিয় ছিলেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন।

এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, হাওয়া ভবনের ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিলে ‘কথিত’ বৃটিশ আমলের পিলার ও তক্ষক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন মাসুদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সরাইল উপজেলার চুন্টা গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে মাসুদুর রহমান ১৯৯৩ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর আশুগঞ্জ উপজেলা আয়কর অফিসে পিয়নের কাজ করেছেন। তবে ২০০১ সালের পর হাওয়া ভবনের সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৃটিশ আমলের পিলার ও তক্ষক ব্যবসার মাধ্যমেই তার উত্থান। এখন ঢাকায় ও নিজ এলাকা সরাইলে তার বহু জায়গা-জমি, ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের পর এবার মাসুদের নজর পড়েছে সংসদ সদস্য পদের দিকে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য হতে চান তিনি।

আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তিনি। গত ১৮ মার্চ সরাইল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে মাসুদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার আসামিরাও ছিলেন। আসামিদের মধ্যে ছিলেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থগিত হওয়া কমিটির বহিষ্কৃত সভাপতি আবদুল হালিম, সহ সভাপতি মো. ছাদেক মিয়া, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ইসমত আলী, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজ আলী, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফেজুল আসাদ সিজার।

ওই সংবাদ সম্মেললে মাসুদুর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ লালন করে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করছি। মুক্তিযোদ্ধা যুবকমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করে আসছি। কেন্দ্রীয় কমিটির সংকেত পেয়েই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, মাসুদ কিভাবে পিয়ন থেকে কোটিপতি হয়েছেন তার গল্প সবার জানা। বিএনপি সরকারের আমলে হাওয়া ভবনের সিন্ডিকেটের সঙ্গে ‘কথিত’ বৃটিশ আমলের পিলার ব্যবসা করে পিয়ন থেকে কোটিপতি হয়েছেন মাসুদ। টাকার জোরে সেই মাসুদ এখন আওয়ামী লীগ নেতা!

এদিকে, হত্যা মামলার আসামিদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রত্যাশার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে নানা মহলে। পুরো সরাইল উপজেলায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন মাসুদের মনোয়ন প্রসঙ্গ।

ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য যে কেউ যেকোনো দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা মামলার আসামিদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা জানানো খুবই দুঃখজনক।

তবে এসব ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মাসুদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তাতে সাড়া মেলেনি তার।

(ওএস/এসপি/মার্চ ২২, ২০১৮)