নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি : রানী বেগম (৩১) স্বামী মোঃ ভলু মিয়া বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির কাজ করতেন। ৩ বছর আগে কোরবানীর ঈদে দিন কাজ করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক স্পষ্টে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ে রেশমিকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। রানী বেগমের সৈয়দপুর পৌরসভার নতুন বাবুপাড়ার কুলিপাড়ার এক ঝুপড়ি ঘরে বাস করে। গত ২২শে জানুয়ারি ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এরশাদ হোসেন পাপ্পুর আমন্ত্রণে বাসায় বাসায় গিয়ে কম্বল বিতরণ কালে খোঁজ মেলে রানী বেগমের । তার কষ্টের কথা শুনে ঘটনাস্থল থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সমাজ সেবা অফিসে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। পরে কাগজপত্র সংগ্রহ করে স্বামী পরিত্যক্ত দুঃস্থ মহিলার ভাতা বই নিয়ে হাজির হন ওই বাড়ীতে ১৩ই মার্চ রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বজলুর রশীদ। 

রহিমা:

আর কত বয়স হইলে মোর ভাতা হইবে, রহিমা বেওয়ার খবর রাখে না কেউ বয়স ৬৮ বছর। স্বামীর মৃত্যুর ৬ বছরেও জোটেনি কোন সাহায্য। অনেকটাই নিরবে নিভ্রতে কেটে যায় রহিমান জীবন। বয়স ভাবে রোগ-ব্যাধি যেন পিছু ছাড়তে নারাজ। ৯ সন্তানের জননী রহিমা। সৈয়দপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কয়ানিজপাড়ার মরহুম মোজাম্মেল হকের স্ত্রী রহিমা তার ৫ ছেলে ৩ মেয়ে সবার বিয়ে হয়েছে।

রহিমা বেওয়া জানান, আর কত বয়স হলে মোর ভাতা হইবে। মোর একটা ভাতা করে দেন বাহে। মানুষের বাড়ীত কাম করি মাসে ৯০০ টাকা পাও। আর দুই বেলা খাবার।

এ নিয়ে সার্চ টিমের ফেইজবুক প্রেইজে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। তাতে কমান্ড পড়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোগাযোগ করতে বলে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ মার্চ ইউএনও নিজেই রহিমার দুয়ারে গিয়ে বিধবা ভাতার কার্ড তুলে দেন।

রেজিনা :

রেজিনা বেওয়ার বাসা সৈয়দপুর উপজেলা খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা বেলপুকুর গ্রামে। ২০ বছর আগে অসুস্থ্য হয়ে মারা যান স্বামী। তার একটি মাত্র ছেলে। তবুও সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু পড়ে আছে। আর রেজিনা মানুষের বাড়ীতে কাজ করে। মাঝে মাঝে অনাহারেও দিন কাটে তার। ৬০ বছরেও জোটেনি বিধবা ভাতার কার্ড। এ নিয়ে সাপ্তাহিক দাগের ভ্র্যাম্যমান প্রতিনিধি আলমগীর হোসেনের লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ পায় গত বছরের ২৭ আগষ্ট। এরই ধারাবাহিকতায় ১ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিধবার ভাতা কার্ড নিয়ে হাজির হন তার বাড়ীতে। ফলে বেজায় খুশি রেজিনা বেওয়া।

তহমিনা :

সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল হামিদের স্ত্রী মোছাঃ তহমিনা বেওয়া। ৩০ বছর আগে স্বামী মারা যায়। ৪৬ বছরে পা রেখেছে তহমিনা। তহমিনা রোগে শোকে কাতর। মানুষের বাসায় কাজ করে তার পেট চলে। মাঝে মাঝে উপাস অনাহারে কাটে তার দিন। ছোট একটা ঝুপড়ি ঘরে তার বসবাস। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি হাজির হন ইউএনও। তার করুন অবস্থা দেখে বয়স্ক ভাতার কার্ডের আশ্বাস দিয়ে আসেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১ এপ্রিল তহমিনা বেওয়ার বাড়ীতে গিয়ে তার হাতে বয়স্ক ভাতার কার্ড তুলে দিলেন ইউএনও। ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে ভাতার টাকা পাবে। প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন সৈয়দপুর পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জোবায়দুর রহমান শাহিন, খাতামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরী, ইন্টার ন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ শাহাবাত আলী সাব্বু, সাংবাদিক আমিরুজ্জামান, এম আর আলী ঝন্টু, আলমগীর হোসেন, সার্চ টিমের সদস্য মোকারম হোসেন।

সৈয়দপুর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার সরকার জানান, এ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের দুই হাজার একশত এগার জনকে সরকার বিধবা ভাতা দিচ্ছেন। চলতি বছরে ১৮২ জন বিধবা ভাতার আওতায় এসেছে। প্রকৃত দুঃস্থরাই এ সুবিধা পেয়েছে।

(এমআইএস/এসপি/এপ্রিল ০৯, ২০১৮)