ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : দেশের সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সংযুক্ত হচ্ছে নতুন রেলপথ। ইতোমধ্যে ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নতুন রেলপথ নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ৯ কিলোমিটার রেলপথ একেবারেই নতুনভাবে নির্মিত হবে। অবশিষ্ঠ ১৭ দশমিক ৫২ কিলোমিটার রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রুপান্তর করা হবে। এই রেলপথ ঈশ্বরদী বাইপাস টেকঅপ পয়েন্ট হতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত স্থাপিত হবে। এজন্য সিগ্ন্যালিংসহ রেললাইন সংস্কার ও নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এই রেলপথ স্থাপনের মধ্যদিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নিরাপদে অতিদ্রুত ও মালবাহী ট্রেন সেবা চালু করা সম্ভব হবে। এতে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগের আয়ও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। যেটি প্রধানমন্ত্রী সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পূর্ত কাজ বর্তমানে চলছে। প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ভারি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য মালামাল রেলওয়ের মাধ্যমে পরিবহণ করা হবে বলে এর আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের চাহিদার ভিত্তিতে রেলপথ মন্ত্রনালয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রেল সংযোগের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্বিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপনে সহায়তার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করে। যেহেতু এটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তাই প্রকল্পটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা। এছাড়া একটা ‘বি’ শ্রেণির রেলওয়ে ষ্টেশন তৈরি, ১৩টি লেভেলক্রসিং এবং ৭টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। সেইসাথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কম্পিউটার বেইজড কালার লাইট সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন, অফিস ষ্টেশনারী, কম্পিউটার সামগ্রী, ফার্নিচারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং একটি জিপ ও ৪টি মোটরসাইকেল ক্রয় করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সুত্র জানায়, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ পরিকল্পনায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পানরমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও সম্প্রসারণের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করবে।

সুত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মোট ৭ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে প্রকল্পটি প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৮৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

(এসকেকে/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০১৮)