আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ধানের শীর্ষের মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ায় শেষপর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি জামায়াতের মহানগর শাখার আমির এ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মেয়র প্রার্থী সরোয়ার ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ভোটের জন্য হেলালের সমর্থন প্রত্যাশা করেন। যদিও নগরীর জামায়াত নেতাদের দাবির মুখে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে মুয়ায্যম হোসাইন হেলালের নাম চুড়ান্ত করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করা হয়েছিলো। এরইমধ্যে বুধবার রাতে মজিবর রহমান সরোয়ার নিজ উদ্যোগে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে এ্যাডভোকেট হেলালের বাসায় গিয়ে বৈঠক করার পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ২০ দলীয় জোটের স্বার্থে এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে মেয়র পদে সমর্থন দেন জামায়াত নেতা এ্যাডভোকেট হেলাল। একইসাথে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ধানের শীর্ষের পক্ষে কাজ করবেন বলেও ঐকমত্যে পৌঁছেন। একইসাথে জামায়াতে ইসলামী যে পাঁচটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়েছে সেখানে বিএনপি কোন প্রার্থী দিতে পারবেনা বলেও জামায়াতের পক্ষ থেকে শর্ত দেয়া হয়।

জামায়াত ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করেছেন মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও নির্বাচন সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম খসরু। বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদার, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর প্রমুখ।

ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগ :

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বরিশালে আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ ও সু-সংগঠিত। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। যে কারণে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামীলীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

সাদিক আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের কাছে আরও বলেন, নগরীর সর্বস্তরের নাগরিকদের জোড়ালো দাবির প্রেক্ষিতে উন্নয়নের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন, আশা রাখি নগরবাসী নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করে তার সম্মান রাখবেন। গত পাঁচ বছরে নগরীতে কোন উন্নয়ন হয়নি দাবি করে সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আমার কোন লিখিত নির্বাচনী ইশতেহার নেই। নগরবাসীর চাহিদা পূরণ ও সাবেক জনপ্রিয় মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণের অসমাপ্ত উন্নয়নকে সম্পন্ন করাই আমার নির্বাচনী ইশতেহার।

১৪ দলের একক মেয়র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ :

১৪ দল বরিশাল জেলা ও মহানগরের এক যৌথ সভায় আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে ১৪ দলের একক মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। জেলা ১৪ দলের সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস এমপি’র সভাপতিত্বে বরিশাল আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সভায় ১৪ দলের উল্লেখ্যযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, অধ্যাপক নজরুল হক নিলু, এ্যাডভোকেট আব্দুল হাই মাহবুব, শহীদুল ইসলাম মিরন, দাশগুপ্ত আশীষ কুমার, অধ্যক্ষ আবু রশিদ, মশিউর রহমান মিন্টু, সৈয়দ আনিস, শান্তি দাস, এ্যাডভোকেট আফজালুল করিম প্রমুখ। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে ১৪ দলের একক মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে।

ইকবাল হোসেন তাপসেই বিভক্ত জাপা :

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বরিশালের জাতীয় পার্টিতে। অচেনা মুখকে দলীয় মেয়র প্রার্থী করায় নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টি (এরশাদ) বরিশাল জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক বশির আহমেদ ঝুনু। এর আগে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলের মনোনয়ন পাওয়া মেয়র প্রার্থী জেলার যুগ্ম আহবায়ক ইকবাল হোসেন তাপস।

বিদ্রোহী প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু বলেন, যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন বরিশালের মানুষ তাকে চেনে না। তিনি কখনও বরিশালের মানুষের পাশে ছিলেন না। এ ধরনের একজন মানুষকে বরিশালে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মেয়র প্রার্থী করায় তৃণমূলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীদের ইচ্ছায় আমি প্রার্থী হয়েছি।

(টিবি/এসপি/ জুন ৩০, ২০১৮)