গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : যন্ত্রণাদায়ক সেই দুর্বিষহ স্মৃতি ভুলে সময়ের স্রোতে এগিয়ে চলছে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত বনানী থানা পুলিশের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোপালগঞ্জের সালাহউদ্দিন খানের পরিবার ও স্বজনরা। 

২০১৬ সালের ১ জুলাই ইতিহাসের জঘন্য জঙ্গি হামলায় নিহত হন সালাহউদ্দিন খান। ওসি সালাউদ্দিনকে গোপালগঞ্জের মানুষ লুই নামে বেশি চিনে। একজন পরোপকারী মানুষ হিসেবে এলাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি। সেই মানুষটি এতো তাড়াতাড়ি সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে তা যেন কেউ মেনে নিতে পারেননি।

ওসি সালাউদ্দীনের পরিবারে এখন আর্থিক অসচ্ছলতা না থাকলেও ভালো নেই তার স্বজনরা। সালাউদ্দীনের স্ত্রী রেমতিম, মেয়ে সামান্তা খান (১৬) ও ছেলে স্যাম রাইয়েন খান (৯) আমেরিকায় বসবাস করেন।

নিহত লুইয়ের ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী খান বলেন, ওই হামলার ঘটনা নিয়ে কথা বলতে আর ভালো লাগে না। বারবার ওই দুর্বিষহ সময়টা স্মরণে এলে আবেগ ধরে রাখতে পারি না। ওই দিনটি আমরা মনে করতে চাই না। মর্মান্তিক ওই হামলার ধকল কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাই নিরীহ মানুষ বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। তিনি আমাদের কাছে বাবার সমতুল্য ছিলেন। আমাদের সব ভালো-মন্দই তিনি দেখতেন। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।

নিহত সালাহউদ্দিনের প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান প্রবাল বলেন, দিনটি মনে করলে এখনও মানসিকভাবে ঠিক থাকতে পারি না। সালাহউদ্দীন একজন সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। আর এ কারণেই তাকে অকালে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করছি।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু বলেন, সালাহউদ্দিন একজন চৌকস ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। বিভিন্ন সময় সরকার উৎখাতের যড়ষন্ত্র প্রতিহত করতে তার ব্যাপক ভূমিকা ছিল। মানুষের বিপদ-আপদে সবার আগে এগিয়ে আসার চেষ্টা করতেন। বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণে সহযোগিতা করতেন। প্রতি বছর ঈদের সময় গরিব মানুষকে নতুন কাপড় ও টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতেন। তার এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও তাদের মদদদাতাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

ওসি সালাউদ্দীন লুইর বাবার নাম আব্দুল মান্নান খান। তিনি গোপালগঞ্জ এস এম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ৭ ভাই ৪ বোনের মধ্যে লুই ছিলেন পঞ্চম। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের কাছে ওসি সালাহউদ্দিন ছিলেন পিতৃ সমতুল্য। পুরো পরিবারটি তার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। পরিবারের প্রায় প্রতিটি সদস্যের যাবতীয় খরচ তিনি চালাতেন। তাই তার অকাল মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। খবর পেয়ে জিম্মিদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তৎকালীন বনানী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোপালগঞ্জের সন্তান সালাউদ্দীন। এ সময় জঙ্গিদের হামলায় তিনিসহ ২০ জন নিহত হন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০১, ২০১৮)