নীলফামারী প্রতিনিধি : নীলফামারীর ডিমলায় ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নে ২টি ও টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে ১টি বাল্যবিয়ের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। যোগযোগ ব্যবস্থা ভাল না এমন দায়সারা কথায় প্রশাসনের নিবর মনোভাব মানতে নারাজ এলাকাবাসী। 

অভিযাগে উঠেছে ঝুনাগাছ চাপানি নিকাহ রেজিষ্টার আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে। তিনি ইউনিয়নের বাল্যবিবাহ নিজে না গিয়ে ভাতিজা ময়নুল ইসলাম মানিক পাঠিয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করেন।

জানা যায়, শুক্রবার রাতে দক্ষিন সোনাখুলি গ্রামের জাহিদুল ইসলামে কন্যা ও সোনাখুলি জহরতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী জেসমিন আক্তারের বিয়ে হয় দক্ষিন গয়াবাড়ী গ্রামের নুরুজ্জামানের সাথে।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্কুল ছাত্রী জেসমিনের বিয়ের সময় একটি প্রভাবশালী মহলের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে। এ সময় এলাকাবাসী ইউএনও, পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবগত করেও বাল্য বিয়েটি বন্ধ করতে পারেনি। ইউএনও নাজমুন নাহার বলেন, আমি নিজে পুলিশকে মোবাইল ফোনে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দিতে বলেছিলাম।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিন খড়িবাড়ী তেলির বাজার গ্রামের অফিসারের কন্যা ও দক্ষিন খড়িবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী সারমিনের বিয়ে হয় ক’দিন পুর্বে।

এ ঘটনায় টেপাখড়িবাড়ির ইউনিয়নের একাধিক এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করবার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,টেপাখড়িবাড়ির ইউনিয়নটি অনেক আগে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে লোক দেখানো ভাবে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষনা করা হয়। কিন্তু আমাদের এই ইউনিয়নে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন এলাকায় নিয়মিত থাকবার পরও মাঝে-মধ্যেই এখানে বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হতে দেখা যায়! আমাদের ধারনা ইউপি চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নের প্রত্যেক শিশু বিবাহর ঘটনা গুলো জেনেও প্রতিনিয়ত না জানার ভান করেই থাকেন ।

যদি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন আন্তরিক হয়ে যতেষ্ট ভুমিকা না রাখে তবে কোনো ভাবেই এসব বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষনা কাজে আসবেনা!

অপরদিকে শনিবার রাতে সোনাখুলি গ্রামের সুভাশ চন্দ্র রায়ের কন্যা ও চাপানি সোনাখুলি সৈকত নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালযের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী শুধা রানী বিয়ে হয় একই এলাকার ননী চন্দ্র রায়ের পুত্র জয়কান্ত রায় (১৫)এর সাথে। পর পর তিনটি বাল্যবিয়ের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর পুলিশ প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানকে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে বলেছিলাম। পরবর্তীতে কোন সংবাদ না পাওয়ায় আমি বাল্যবিবাহ হয়নি মর্মে নিশ্চিত ছিলাম।

ডিমলা থানার ওসি মফিজ উদ্দিন শেখ বলেন, বাল্যবিয়ের ঘটনার বিষয়টি আমার জানা নেই। বাল্য বিবাহের ঘটনার পুলিশ যাওয়ার নিয়ম নাই। ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত হলে পুলিশ সেখানে যেত পারত।

ঝুনাগাছ ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, বাল্যবিবাহের ঘটনা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছিল।
ঝুনাগাছ চাপানি নিকাহ রেজিষ্টার আইয়ুব আলী বলেন, আমি তো রাতের বেলা কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই না আমার প্রতিনিধি হিসেবে ভাতিজা ময়নুল ইসলাম মানিক গিয়ে থাকে। নিজে না গিয়ে ভাতিজা দিয়ে বাল্যবিবাহ সম্পর্ন করার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়েফোনটি বন্ধ করে রাখেন।

(এমআইএস/এসপি/জুলাই ০৯, ২০১৮)