কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের টেকনাফে যে আওয়ামী লীগ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তুলনা করে এমপি বদিকে বেশি জনপ্রিয় বলে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছিলেন তাকে গতকাল শনিবার দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

সেই সঙ্গে এমন আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদ না করায় উখিয়া-টেকনাফ আসনের দলীয় বিতর্কিত এমপি আবদুর রহমান বদি ও বিএনপি থেকে দলে অনুপ্রবেশকারী টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। ওইদিন বিকেলে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৮ সেপ্টেম্বর টেকনাফ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক ঈদ পূণর্মিলনী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় এমপি আবদুর রহমান বদি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমদ। তিনি টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

সভায় টেকনাফের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এমপি বদির অনুগত কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা এমপি আবদুর রহমান বদির প্রশংসাসূচক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে এমপি বদির জনপ্রিয়তা ও গুণকীর্তন করতে গিয়ে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এম জহির হোসেন বলেন, এমপি বদি এমনই জনপ্রিয় যে তার সঙ্গে কোনো বিশ্ব নেতারও তুলনা হয় না। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে বসেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এমপি বদি এমনই জনপ্রিয় যে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শেখ হাসিনাও বিপুল ভোটে পরাজিত হবেন। গত ১০ সেপ্টেম্বরের এ ঘটনায় জেলাব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা এমপি আবদুর রহমান বদি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকা টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমদ এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য নিয়ে কোনো টু শব্দও করেননি। একজন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতার এরকম আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এমনকি গত ক’দিন ধরে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ-উখিয়ায় ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য প্রদানকারী নেতার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলও বের করা হয়।

শেষ পর্যন্ত গতকাল অনুষ্ঠিত টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ বক্তব্য প্রদানের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সভাপতি এম জহির হোসেনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সর্বসন্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত নেতাদের প্রতিবাদ মুখর পরিস্থিতিতে এমপি আবদুর রহমান বদি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমেদর বিরুদ্ধেও অনুরূপ দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন নেয়া হবে না মর্মে দেয়া হয় কারণ দর্শানো নোটিশ।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর সভার এ রকম সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সেদিন প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে দেয়া এম জহির হোসেনের বক্তব্য নিয়ে এমপি বদি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ কোনো প্রতিবাদ না করায় সভা মনে করে যে, এম জহির হোসেনের বক্তব্যকে তারা (এমপি বদি ও চেয়ারম্যান জাফর) মৌন সমর্থন জানিয়েছিলেন। এ কারণেই তাদেরকেও অনুরূপ শাস্তির জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়।

গতকালের সভায় ৬৭ সদস্যের কমিটির মধ্যে ৫৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর আরও জানান, আবদুর রহমান বদি এমপি নির্বাচনের পর থেকেই টেকনাফে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮)