সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি : অনূকুল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যায় এ বছর সিংগাইর উপজেলায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। বছরের প্রায় ৮-১০ মাসই এখানে পাওয়া যায় পরিপক্ক আখ। এখন চলছে আখের ভরা মৌসুম। 

সুদীর্ঘকাল ধরে এখানকার বেলে- দোআঁশ মাটিতে ব্যাপক আখের আবাদ হয়ে আসছে। এক দশক আগেও আখ থেকে গুড় উৎপাদনই ছিল এখানকার কৃষকদের প্রধান অর্থকারী ফসল। সময়ের বিবর্তে এখন আর গুড় তৈরীর আখ তেমনটা চাষ হয় না। সে স্থান দখল করেছে মুখে চিবিয়ে খাওয়ার উপযোগী উন্নতমানের বোম্বাই গেন্ডারি (আখ)। সিংগাইরে উৎপাদিত আখ/গেন্ডারি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শবর্তী সাভার, কেরানীগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকা শহরে দেদার বিক্রী হচ্ছে। আর্থিক ভাবেও লাভবান হচ্ছেন এ এলাকার আখ চাষিরা। বছরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার আখ এ অঞ্চলে উৎপাদন হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৭শ ১০হেক্টর বা ৫হাজার ৫শ বিগা জমিতে অমৃত, বোম্বাই ও সাতাশ জতের আখ আবাদ হয়েছে। ফলন ও হয়েছে ভাল।

আখ চাষ প্রবণ এলাকা বায়রা ইউনিয়নের সানাইল গ্রামের কৃষক আয়ুব আলী বেপারী (৬০) বলেন, এক বিগা জমিতে ৩২শ থেকে ৩৬শ চাড়া রোপন করতে হয়। বছর শেষে গড়ে বিগা প্রতি ১১-১২ হাজার পরিপক্ক আখ পাওয়া যায় । যার বাজার মূল্য লাখ টাকার উপরে।

তিনি আরো বলেন, একবার চাড়া লাগালে তিন বছর ওই জমি থেকে ভাল ফলন পাওয়া যায় । এ বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে অমৃত জাতের আখ আবাদ করেছেন । প্রতিটি আখ ১৪-১৫ ফুট লম্বা হয়েছে।

চাড়াভাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ জানান, উত্তরাধিকার সূত্রে আমারা আখ চাষের সঙ্গে জড়িত। যুগ যুগ ধরে বাপ- দাদারা গুড় তৈরীর আখ চাষ করলেও ২০০৮ সাল থেকে চুইং টাইপ গেন্ডারীর আবাদ করছি । এ বছর ৬বিঘা জমিতে অমৃত ও বোম্বাই জাতের আখ লাগিয়েছি। ফলনও হয়েছে বাম্পার।

জামালপুর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সেকান্দার আলী বলেন, আখ চাষ প্রবন এ এলাকায় প্রায় সাড়া বছর পরিপক্ক আখ পাওয়া যায়। খরচ বাদে বিঘা প্রতি ৬০-৭০হাজার টাকা লাভ হওয়ায় এখানকার কৃষকরা আখ চাষের দিকে ঝুঁকছে ।

তিনি আরো বলেন, সমপরিমান জমিতে বছরে তিন বার ধান চাষ করে যে লাভ হয় আখ থেকে তার দ্বিগুন টাকা পাওয়া যায় ।

সাহরাইল বাজারের আখ বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে আধা বিঘা জমির আখ ক্রয় করেছি। অর্ধেক বিক্রি করেই চালান উঠে এসেছে । সব গুলো বিক্রি করলে দ্বিগুন লাভ হবে বলে তিনি জানান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিংগাইর পৌরসদরের আজিমপুর, বিনোদপুর, বায়রা ইউনিয়নের সানাইল, চারাভাঙ্গা, জামালপুর, সৌরভপুর, গ্যাড়াদিয়া, নয়াবাড়ি, তালেবপুর ইউনিয়নের মজলিসপুর, জামশা ইউনিয়নের উত্তর জামশা, দক্ষিণ জামশা, মাটিকাটা, চান্দহর ইউনিয়নের বৈন্যা, আটিপাড়া, চর আটিপারা, ধল্লা ইউনিয়নের মেদুলিয়া, কামুড়া, নয়াপাড়া ও চর উলাইল গ্রামে ব্যাপক আখের আবাদ হয়েছে। আখ চাষ পাল্টে দিয়েছে এ উপজেলার হাজারো কৃষক ও বেপারীর ভাগ্যের চাকা।

তবে আখের চাষের সাথে জড়িত অনেক চাষীরা বলেন, এ অঞ্চলে এখন আর আখের রস থেকে গুড় উৎপাদন করছেন কৃযকরা। অল্প পরিশ্রমে লাভ বেশি হওয়া উন্নত জাতের মুখে খাওয়ার আখ চাষ করেছেন তারা।

(এমবি/এসপি/অক্টোবর ০৭, ২০১৮)