চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : নাম তার মোহাম্মদ কাওছার শাহ্। শিক্ষিত যুবক তিনি। কম্পিউটারের ব্যবসা করতেন নগরীর চকবাজারে। শখের বশে নগরীর কাছাকাছি উপজেলা কর্ণফুলীতে গড়ে তোলেছেন একটি কৃষি খামার বাড়ি। নারকেল, পেঁপেঁ আর সুপারি গাছের মাঝখানে পুকুর আর তাতে গড়ে তোলেছেন একটি গবাদি পশুর ফার্ম। নাম হল- ফ্র্যাঞ্জ ডেইরী ফার্ম।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ফাজিলখাঁর হাট সংলগ্ন দৌলতপুর গ্রামে এটির অবস্থান। শঙ্খ নদীর তীরে সি.ও.এল একোয়া কালচারের বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা এ ফার্ম। স্থানীয়দের অনেকে ফার্মকে প্রজেক্ট বলে থাকেন।

জানা যায়, ২০১০ সালে তিনটি দেশীয় গরু দিয়ে তার এই ফার্মের যাত্রা শুরু। শখের বশে গড়ে তোলা ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ক্ষুদ্র পরিসরে ফার্ম এটি। দীর্ঘ ৮বছর পর আজ মোহাম্মদ কাওছার শাহ্’র পরিচালিত ফ্র্যাঞ্জ ডেইরী ফার্ম দেশের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন।

তরুণ এই উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, পুর্বে কম গাঁভী থাকায় ৩০ লিটার দুধ উৎপাদন হতো। আয় হত কম তবে হাল ছাড়েন নি তিনি। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন। বর্তমানে ফার্মে তার ৪৫টি বড় গাভী এবং বকনা বাছুর সহ সর্বমোট ৭৬টি গবাদি পশুর আচরণ ভূমি। দৈনিক দুধ উৎপাদন হয় ২৭০ থেকে ২৯০ লিটার। প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হয় ৩৫/৪০টাকা। দৈনিক আয় হয় ১০ হাজারের উপরে মাসে ৩ লাখের সমপরিমাণ। খামারের শ্রমিক ও নানা আনুসঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা অনায়সে আয় হয় এখন। তবে হিসাবটা মাসিক না কওে বছরে করেন বলে জানান খামার মালিকেরা। এতে বছরে ৯লাখ টাকা ইনকাম হয়।

অন্যদিকে এ খামারের নিজস্ব খাঁটি দুধ আবার আধুনিক প্রক্রিয়ায় প্রসেসিং করে ‘ফ্র্যাঞ্জ মিল্ক’ নামে বাজারে প্যাকেট আকারে বিক্রি হয়। পরিত্যক্ত জমিতে খামার গড়ে সহজে বেকার থেকে স্বাবলম্বী হতে পারে যে কেহ। খামারের দুধ যা সুষম খাদ্য তথা দেশে দুধের চাহিদা পুরণে একটা ভুমিকা রাখছে। তাছাড়া ফ্র্যাঞ্জ ডেইরী ফার্মে রয়েছে অত্যাধুনিক খামার যন্ত্রপাতি ও পশুর রোগ নিরাময় করার আধুনিক নানা কলা-কৌশল। যা রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে।

গবাদি পশু পালন, মাছ চাষ, সবজি চাষ ও হাঁস মুরগি পালনের মত কর্মসংস্থান যেন স্বল্প পরিসরে এলাকার বেকাররা গড়ে তোলেন তার প্রচার ও প্রসার করার লক্ষ্য ‘ফ্র্যাঞ্জ ডেইরী ফার্ম’ এর মালিক নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন কোর্স ও সেমিনার করে থাকেন। তিনি বেকার যুবকদের এই পেশায় সব সময় আহবান জানান। কেনোনা অনেক বেকার মাদকে আসক্ত হচ্ছে।

ফ্র্যাঞ্জ ডেইরী ফার্মে বিদেশী গিরোল্যান্ডো, জার্সি, লোকাল ফ্রিজিয়ান ও সাইওয়াল ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী পালনের পাশাপাশি খামারে সমন্বিত মাছ চাষে তিনটি পুকুর রয়েছে। চার দিকে তার নানান ফলন জাতের ফলজ গাছ রোপন করা হয়। আম, জাম, পেঁপেঁ, কাঁঠাল, লেবু ইত্যাদি ও গাছ লক্ষণীয়।

বর্তমানে ফার্মের সার্বিক রক্ষনাবেক্ষণে কর্মরত ১৫/২০জন শ্রমিক কাজ করেন। এতে আশপাশের অনেক গরীব লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে খামারে। আরো রয়েছে বিদেশী শেপার্ড এর মত দামী ও হিংস্র কুকুর।

ফ্র্যাঞ্জ ডেইরী ফার্ম এর মালিক মোহাম্মদ কাওছার শাহ্ জানান, ‘দেশের কর্মসংস্থান ব্যাংক গুলো যদি বিনা জামানত ও বিনা ইন্টারেস্ট এ আরো সহনশীল ভাবে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করেন তবে দেশে বেকারত্ব আরো কমবে বলে মনে করেন তিনি।’

পাশাপাশি দেশের রাজস্ব আয়ে এসব ক্ষুদ্র খামার বাড়ি ও কৃষিজাত ব্যবসা বিরাট ভুমিকা রাখতে পারে বলে খামার ব্যবসায়িদের ধারনা।

অপরদিকে বিদেশ হতে যদি নানা প্যাকেটজাত গুড়া দুধ, ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করা হয় তবে দুধ, মাছ ও মাংস সহ দেশীয় গবাদি পশু পালন ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান। অনেকের অভিযোগ গো-খাদ্যর দাম বেশি থাকায় অনেক খামার ব্যবসায়িরা পশু পালনে হিমশিম খাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ফ্র্যাঞ্জ ডেইরী ফার্ম এর মালিক ডেইরী খামার মালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ডেইরী ফারমার্স এসোসিয়েশন’ এর কার্যকরী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

(জেজে/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০১৮)