নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদী জেলার শিবপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে একটি বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। উয়ারী-বটেশ্বর খনন এলাকার শিবপুর উপজেলার টঙ্গীরটেক এলাকায় বৌদ্ধ মন্দিরটি উন্মোচন করা হয়।

এর আগে উয়ারী-বটেশ্বরে সমৃদ্ধ সভ্যতার বহু প্রত্নচিহ্ন থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করছিলেন, এ নগরীকে ঘিরে আরও কিছু স্থাপনার সন্ধান মিলবে। বৌদ্ধ মন্দির উন্মোচনের পর প্রত্নতাত্ত্বিক ও গবেষকদের এ ধারণাই জোর সমর্থন পেল। গবেষকরা ধারণা করছেন, মন্দিরটি প্রায় দেড় হাজার বছর আগের। উয়ারী-বটেশ্বরে সমসাময়িক সময়ে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির ও স্থাপনার সন্ধান পাওয়ায় বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আদি বসবাসে উয়ারী-বটেশ্বর যুক্ত হবে।
আজ শনিবার সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ত্রয়োদশ ধাপের খননকাজের সমাপনীতে প্রত্ন এলাকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করবেন বলে জানা গেছে।
উৎখনন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, টঙ্গীরটেক বৌদ্ধ মন্দিরটি উয়ারী-বটেশ্বরের মূল প্রত্ন এলাকা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। বৌদ্ধ মন্দিরটি উৎখননে নতুন মাত্রা যোগ করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের জন্য বহুমাত্রিক তাৎপর্য বহন করে এনেছে এই নতুন সন্ধান। ২০১১ সালে ওই স্থানে একটি স্থাপত্য রয়েছে বলে নিশ্চিত হয় উৎখনন দল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে খনন করে মন্দিরের গর্ভগৃহ পাওয়া যায়। চলতি বছর মন্দিরের এক-চতুর্থাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এ বছরের খননে মন্দিরটি দৃশ্যমান হয়েছে।
স্থাপনাটি বৌদ্ধ মন্দির হিসেবে চিহ্নিত করার কারণ হচ্ছে- এটির মধ্যে গর্ভগৃহ রয়েছে। একই সঙ্গে একটি বারান্দা ও মণ্ডপ রয়েছে, যেগুলো মন্দিরের আনুষঙ্গিক অঙ্গ। গর্ভগৃহের চারটি দেয়ালই পাওয়া গেছে।
তাতে দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে আট ফুট দেয়াল এখনো টিকে রয়েছে। গর্ভগৃহের পাশেই রয়েছে প্রদক্ষিণ পথ। এর বাইরেই রয়েছে মন্দিরের মূল দেয়াল। ৫০ ফুট বর্গাকার বৌদ্ধ মন্দিরটির দেয়াল দেড় মিটার প্রশস্ত। কাদামাটির গাঁথুনিই দেয়ালের ভিত্তি। মূল দেয়ালের চারদিকে ইট বিছানো প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। মূল মন্দিরের ৪০ মিটার দূরে প্রতিরক্ষা দেয়াল রয়েছে। মন্দিরের শুধু উত্তর দিকের দেয়ালের অংশটি উন্মোচন করা হয়েছে।
এরই মধ্যে খনন করতে গিয়ে বের হয়ে এসেছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরের সমসাময়িক মানব বসতির ৬০০ মিটার বাই ৬০০ মিটার বিস্তৃত এই দুর্গ এলাকা, ইটের স্থাপত্য, প্রশস্ত রাস্তা, পার্শ্বরাস্তা, দুর্গ প্রাচীর, পরিখা, অসম রাজার গড়, লৌহ নির্মিত হস্ত-কুঠার, বল্লম, পোড়া মাটির নিক্ষেপাস্ত্র, তাবিজ, ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা, উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, কাচের পুঁথি, বাটখারা, গর্তনিবাস, মুদ্রা ভাণ্ডার, নবযুক্ত মৃৎপাত্র, ধাতব চুড়ি বা তাম্র বলাই, পোড়া মাটির চাকতি ইত্যাদি। ধারণা মতে, এসবের বয়সকাল খিস্টপূর্ব ৬০০ থেকে ১০০ বছর আগের, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সমতট (কুমিল্লা) এবং পুণ্ড্রবর্ধন জনপদে (বগুড়া, নওগাঁ ও দিনাজপুর) বৌদ্ধ বিহার, মন্দির ও স্তূপ আবিষ্কৃত হলেও মন্দিরভিটা, ধূপিরটেক ও টঙ্গীরটেকে আবিষ্কৃত বৌদ্ধ মন্দিরটি উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে প্রথম (মধুপুর গড় অঞ্চলে) বৌদ্ধ সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করছে।
(ওএস/এএস/জুলাই ১৯, ২০১৪)