স্টাফ রিপোর্টার : ঈদ বাজারে জমে উঠেছে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বিক্রি। বিশেষ করে ফ্রিজ, টিভি, এয়ারকন্ডিশনার ও হোম এ্যাপ্লায়েন্স পণ্য বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। সুখের খবর হলো এসব পণ্যের বাজার এখন দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। ঈদের বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতিও নিয়েছেন স্থানীয় উৎপাদনকারী ও আমিদানীকারকেরা। শোরুমগুলোতেও ক্রেতাদের বেজায় ভীড়। বিক্রির চাপ থাকবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।

দেশের ফ্রিজ, টিভি, এসি ও হোম এ্যাপ্লায়েন্সের সিংহভাগ মার্কেট শেয়ার ওয়ালটনের। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি বেড়েছে তাদের। একদিকে ঈদ, অন্যদিকে গরম। দুইয়ে মিলে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে ওয়ালটনের ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশনার। ঈদ মানেই বিনোদন। তাই প্রচুর টিভি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ওয়ালটনের মোটরেসাইকেল ও হোম এ্যাপ্লায়েন্স বা গৃহস্থালী পন্যও চলছে ব্যাপক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে ওয়ালটনের মোবাইল ফোন সেট। ঈদের বাজারে তরুণ-তরুণীসহ সবার পছন্দের শীর্ষে ওয়ালটন ব্রান্ডে মোবাইল ফোনসেট।

জানা গেছে, গত কয়েক বছরে দেশীয় পণ্যের প্রতি ক্রেতা আকর্ষণ বেড়েছে অনেক বেশি। গুনগত উচ্চমান, আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে ওয়ালটন পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। এবার রোজার শুরু থেকেই ওয়ালটন পণ্যের বিক্রি উর্ধমুখী।

ওয়ালটনের মার্কেটিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক এমদাদুল হক সরকার জানান, রমজানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৮০ হাজার ফ্রিজ বিক্রি করেছেন তারা। এছাড়া ব্ল্যান্ডার, জুসার, রাইসকুকার, সালাদ মেকার, আয়রণসহ হোমএ্যাপ্লায়েন্সের পণ্যও বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। পাশাপাশি এলইডি টিভি বিক্রিও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় ফ্রিজ বিক্রির হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংংশ বেড়েছে। তিনি আরো জানান, ঈদের বোনাস পাওয়ার পর হঠাৎ করে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাবে। সেই বাড়তি চাহিদা মেটাতে এরইমধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।

বিপণন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসেন জানান, দিনদিন ওয়ালটনের পণ্য বিক্রি প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সালাদ মেকার, ব্ল্যান্ডার, রাইস কুকার বিক্রি বেড়েছে এই ঈদে। মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষ এসব পণ্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।

আরেক দেশীয় ব্র্যান্ড মার্সেলের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন রাজিব জানান, ঈদ এলেই ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা বাড়ে। এবছর রোজার শুরু থেকেই প্রত্যাশার চেয়ে ক্রেতাদের বেশি সাড়া পাচ্ছি। অন্যান্য বছরের মতো এবার ঈদেও বিক্রির টার্গেট পূরণ হবে। তিনি দাবি করেন, পণ্যের গুনগত উচ্চমান এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে ক্রেতারা মার্সেল পণ্য বেছে নিচ্ছেন। গ্রাহকের চাহিদা মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত টিভি ও ফ্রিজের নতুন নতুন মডেল যোগ হচ্ছে মার্সেল পণ্য সম্ভারে।

রাজধানীর কয়েকটি ওয়ালটন প্লাজায় গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের ভীষণ ভীড়। প্লাজাগুলোর বিক্রি বেড়েছে। স্টেডিয়াম মার্কেটে ওয়ালটনের ডিস্ট্রিবিউটর আবাবিল ইলেকট্রনিক্সের বিক্রেতা মিন্টু মিয়া জানান, ওয়ালটনের ফ্রিজ কিনলে মিলছে রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি। তাছাড়া দেশব্যাপী বিস্তৃত সাভিস সেন্টারের কারণে বিক্রয়োত্তর সেবা এখন ক্রেতাদের দোরগোড়ায়। মানে সেরা, সেইসঙ্গে দামে সাশ্রয়ী বলে ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ এখন ওয়ালটন।

এদিকে সিঙ্গারও ঈদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করেছে। রাজধানীর মুগদা বিশ্বরোড শো-রুমের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, ঈদে তাদের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। পুরোনো ব্র্যান্ড হওয়ার কারণে সিঙ্গারের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক। বেচাবিক্রি খুবই ভালো বলে জানালেন তিনি।
স্টেডিয়াম মার্কেটের এলজি বাটারফ্লাইয়ের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মোস্তাফিজ হোসেন বলেন, ঈদে সাধারণত হোমএ্যাপ্লায়েন্স ও ফ্রিজ বিক্রি হয় বেশি। ঈদ উপলক্ষে ক্র্যাচ কার্ডে উপহার ছাড়াও নগদ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ছাড় দিচ্ছেন তারা।

স্টেডিয়াম মার্কেটে মাইওয়ান শো-রুমের বিক্রয় কর্মকর্তা রাজিব জানান, প্রথম রোজা থেকেই তাদের বিক্রি ভালো। চাঁদ রাত পর্যন্ত বিক্রি চলবে বলে জানান তিনি।
শুধু দেশী ব্র্যান্ডগুলোই নয় ঈদের কারণে স্যামসাং, ট্রান্সকম, সনি র‌্যাংগসের পণ্য বিক্রিও বেশ জমে উঠেছে। ঈদে পণ্য বিক্রির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হবে বলে জানালেন বিক্রেতারা।

(এমএ/জেএ/জুলাই ১৯, ২০১৪)