আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কবল থেকে সারা দেশ ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় পতাকা উড়লেও বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা হানাদারমুক্ত হয় ২২ ডিসেম্বর। 

বিজয়ের ৬ দিন পরে আজকের এই দিনে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা (তৎকালীন গৌরনদী উপজেলা) বিজয় পতাকা উড়েছিল। দীর্ঘ ২৮দিন মুক্তি বাহিনী ও মুজিব বাহিনীর যৌথ আক্রমণের পর বাধ্য হয়ে এই দিন শতাধিক পাকসেনা গৌরনদী সরকারী কলেজে মাঠে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। ফলে বাংলাদেশের সর্বশেষ হানাদারমুক্ত এলাকা হয় আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে এখনও সরকারী উদ্যোগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ। আজও সরকারীভাবে চিহ্নিত হয়নি আগৈলঝাড়া উপজেলার ৬টি ও গৌরনদী উপজেলার ৪টি বধ্যভূমি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা এসকল এলাকায় কয়েক হাজার লোক লোক নির্বিচারে হত্যা করে। পাকহানাদার বাহিনীর হাতে ইজ্জত হারাতে হয়েছিল ৩ শতাধিক মা-বোনের। এই এলাকায় সর্বপ্রথম শহীদ মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, এ্যাড. আ. করিম সরদার এমএলএ’র উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়। ওই দলের প্রধান ছিলেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান তালুকদার। তার সহযোগী ছিলেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহম্মদ গোমস্তা। কোটালীপাড়ার হেমায়েত উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠন করা হয় হেমায়েত বাহিনী।

হেমায়েত ও তার বাহিনী আগৈলঝাড়া-রামশীল-পয়সারহাট-সিকিরবাজার এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করেন। সর্বশেষ মুজিব বাহিনীর একটি দল ভারত থেকে ট্রেনিং শেষে আগৈলঝাড়ায় এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লহি।

এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন রকিব সেরনিয়াবাত, ফজলুর রহমান হাওলাদার ও মেজর শাহ আলম তালুকদার। বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ১৬ ডিসেম্বরের পূর্বে আত্মসমর্পণ করলেও দীর্ঘ ২৮দিন পর সরকারি গৌরনদী কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থানরত পাক সেনারা ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর মেজর ডিসি দাসের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করেছিলো। সেই থেকেই ২২ ডিসেম্বর আগৈলঝাড়া মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ২১, ২০১৮)