চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : অনান্যবারের মত এবছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় আলু চাষে চাষীদের আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আলুর ভরা মৌসুমেও বিগত কয়েক বছর ধরে আলুর কাঙ্খিত বাজার মূল্য না পাওয়ায় আলু চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে জানান অধিকাংশ চাষী। ফলে জেলা কৃষি অফিস গত বছরের তুলনায় এবার আলুর লক্ষমাত্রা অর্ধেক নির্ধরণ করলেও নির্ধারিত লক্ষমাত্রার চেয়ে কম আলুর আবাদ হবে বলে ধরণা করছে অনেকে।

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক সেলিম জানান গত বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলু চাষ করে প্রায় দুইশ মন আলু পেয়েছিলেন। কয়েকদিন ধরে বাড়িতে বসে ক্রেতা না পেয়ে পরে পানির দরে সেই আলু বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। যার ফলে আলু চাষে তিনি এবার ঝুকি নিতে চান না।

একই গ্রামের কৃষক ফয়সাল বলেন গত বছর ৫ বিঘা জমিতে আলুর বাম্পার ফলন হয় তার। অনেক চেষ্টায় এক ব্যাপারীকে আলু বিক্রির জন্য বাড়িতে নিয়ে আসলেও শেষ পর্যন্ত আলু বিক্রি করতে পারেনি তিনি।

একই অবস্থা গ্রামের অন্যান্য আলু চাষীদের। চাষীরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। কপাল যদি ভাল হয় তবে সেই আলু প্রতি বিঘা বিক্রি হয় ২৪/২৫ হাজার টাকায়। অন্যদিকে জেলায় কোন হিমাগার না থাকায় ভরা মৌসুমে চাষীদের আলু রাখতে যেতে হয় পাশ্ববর্তী ঝিনাইদহ অথবা যশোর হিমাগারে। ওখানেও গুনতে হয় বাড়তি টাকা। সব মিলিয়ে চাষীদের আলু চাষ যেন গলার কাঁটা হয়ে দাড়ায়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য অনুসারে চলতি মৌসুমে জেলায় আলু চাষে লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৯ হেক্টর। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৯৫ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ১৪০ হেক্টর, দামুড়হুদায় ৭৮ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৬৭৬ হেক্টর। গত বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় আলুর লক্ষমাত্রা
ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৩ হেক্টর। তবে গত বছর আলু উৎপাদিত হয় ১ হাজার ৯৬০ হেক্টর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাঈম আস-সাকিব বলেন, চুয়াডাঙ্গায় সরকারি-বে-সরকারি কোন হিমাগার আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। ভরা মৌসুমে গত বছর আলু বিক্রি করে সঠিক মূল্য না পাওয়ায় এবার চাষীরা আলু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।

অবিলম্বে সরকারের কাছে কৃষি পণ্য সংরক্ষণের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলায় একটি হিমাগার নির্মানের দাবি জানান ভুক্তভোগী কৃষকেরা।

(টিটি/এসপি/ডিসেম্বর ২২, ২০১৮)