স্টাফ রির্পোটার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার তিন দিনের সফরে লন্ডনের পথে রওনা হয়েছেন। মেয়েদের বিরুদ্ধে প্রথাগত সামাজিক অপরাধের প্রধান দুটি দিক ফিমেইল জেনিটাল মিউটিলেশন (এফজিএম) বা মেয়েদের খতনা এবং বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে বা চাইল্ড আর্লি ফোর্সড ম্যারেজ (সিইএফএম) বিরোধী সামিটে যোগ দিতে লন্ডনে যাচ্ছেন তিনি।

সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় বিমানের বিজি-০০০৫ ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল। স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে তিনটায় লন্ডন হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।
হিথরো বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজারুল কায়েস, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন, ডিএফআইডি’র পরিচালক অ্যান্থনি স্মিথের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে হোটেল হিলটনে অবস্থান করবেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের আমন্ত্রণে ২২ জুলাই মঙ্গলবার, লন্ডনে অনুষ্ঠেয় এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। সেখানে মেয়েদের বিরুদ্ধে সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে তার নিজের ভাবনা, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের চলমান প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টা ব্রিটেনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সুস্পষ্ট বলেই এই সামিটে শেখ হাসিনার যোগদানকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে সামিটের লক্ষ্য বাস্তবায়নে তা অনুপ্রেরণা হতে পারে বলেই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
তিন দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সাথে একান্ত বৈঠক করবেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় ব্রিটেন-বাংলাদেশ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় প্রাধান্য পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট পক্ষ।
সামিট শেষে মঙ্গলবার বিকেলেই যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক ইফতার মাহফিলের প্রস্তুতি চূড়ান্ত বলে নিশ্চিত করেছেন।
মেয়েদের খতনা এবং বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়েবিরোধী শীর্ষ সম্মেলন এটাই প্রথম। এর হোস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। কো-হোস্ট হিসেবে রয়েছে ইউনিসেফ এবং যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এফজিএম ও সিইএফএম প্রতিরোধে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার লক্ষ্য সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সম্মেলন। প্রাক-সম্মেলন ঘোষণায় বলা হয়েছে, বৈষম্য ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে বসবাস করে নিজেদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের অধিকার মেয়েদের রয়েছে। কিন্তু লাখ লাখ নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে প্রতিদিন শিকার হচ্ছে এফজিএম ও সিইএফএম এর মত ক্ষতিকর প্রথার, যা ব্রিটেনে অবৈধ। ঘোষণায় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, পরিস্থিতি দ্রুতই বদলাচ্ছে, এটি অবশ্যই বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্যে একটি সুসংবাদ। ব্রিটেন, আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে এখন এ ধরনের ক্ষতিকারক প্রথার বিরোদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই সচেতনতাকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে এখন প্রয়োজন বিশ্ব সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রয়াস। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে এফজিএম ও সিইএফএম এর মত ক্ষতিকর প্রথা অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নারী, বালিকা, কমিউনিটি ও ধর্মীয় নেতাসহ সরকার, সিভিল সোসাইটি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি খাতের অঙ্গিকার আদায়ে গার্ল সামিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এফজিএম ও সিইএফএম প্রথা মোকাবেলায় যারা সফলতা দেখিয়েছেন, তাদের গল্পও গার্ল সামিটে উপস্থাপন করা হবে। সামিটে সেইসব নারী ও মেয়েদের কথা শোনা হবে, যারা এফজিএম ও সিইএফএম প্রথার মধ্যে বসবাস করেও সাহসের সাথে তা মোকাবেলা করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা। সাংবাদিকদের একটি গ্রুপও আন্তর্জাতিক এই গুরুত্বপূর্ণ সামিটে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন।
(ওএস/এএস/জুলাই ২১, ২০১৪)