মাঈনুল ইসলাম নাসিম : অপসারিত রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকারকে বরখাস্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানানো হয়েছে লেবাননের রাজধানীতে আয়োজিত বিজয় উৎসবে। বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যান সমিতির ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আগত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসীরা একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে আতশবাজি ফুটিয়ে রাতভর আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেন। দূতাবাস কলংকমুক্ত হওয়ায় তৃপ্তির হাসি পরিলক্ষিত হয় নিপীড়িত-নির্যাতিত প্রবাসীদের চোখে-মুখে।

সময়পোযোগী সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উষ্ণ অভিনন্দন জানানো হয় বৈরুতের বিজয় মঞ্চে। তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজিত সভায় বক্তারা বিতর্কিত রাষ্ট্রদূত গওসোলকে অবিলম্বে বরখাস্তের দাবী জানিয়ে বলেন, দেশ ও জাতির সুনাম বিনষ্টকারী এই ধরণের লোকদের যাতে আর কোনদিন কোথাও নিয়োগ দেয়া না হয়। বক্তারা বলেন, গত এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া নেক্কারজনক ঘটনাপ্রবাহ লেবানিজ মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচারিত হওয়ায় গোটা লেবাননে আজ ইমেজ সংকটে বাংলাদেশ।

প্রবাসী কল্যান সমিতির আহবায়ক মফিজুল ইসলাম বাবুর সভাপতিত্বে এবং সদস্য আমিনুল ইসলাম আইমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যানের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আবুল বাসার প্রধান, সাবেক সাধারন সম্পাদক মানিক মোল্লা, বাংলাদেশ-বৈরুত এসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি জসিম উদ্দিন, গওসোল-সাদিয়ার নির্দেশে দালাল সিন্ডিকেটের হাতে লাঞ্ছিত সাধারণ সম্পাদক আবু করিম, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সুফিয়া আক্তার বেবী, আবদুল খালেক তাহের ও নজরুল ইসলাম মজুমদার সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা আরো বলেন, গওসোল আযম সরকার ও সাদিয়া আযম এক বছর আাগে সুইডেন থেকে যে কলংক নিয়ে লেবাননে এসেছিলেন, আজ তার চাইতেও বহুগুণ বেশি কলংকের বোঝা মাথায় নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন। প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি অধ্যুষিত লেবাননে দালাল সিন্ডিকেট কর্তৃক আগামী দিনে দূতাবাসের ভেতরে-বাইরে দুর্নীতি ঠকবাজি প্রতারণা লুটপাট সহ যে কোন অন্যায়-অনিয়ম প্রতিহত করার অঙ্গীকার ঘোষণা করেন বৈরুতের উভয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

দেশ ছাড়তে লেবানিজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আল্টিমেটামের মুখে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঢাকায় ফিরে যাবার নির্দেশ পাবার পর থেকে বৈরুতের বাংলাদেশ হাউসেই সস্ত্রীক অবস্থান করছেন গওসোল আযম। বাসভবন ছেড়ে হোটেল বা অন্য কোথাও উঠার কথা থাকলেও বিশেষ বিবেচনায় তাদেরকে ‘গেস্ট’ হিসেবে বাংলাদেশ হাউসেই থাকার অনুমতি দেয়া হয়। পদ থেকে অপসারিত হবার পরও গওসোল আযম চেয়েছিলেন রাষ্ট্রদূতের সরকারি ‘ব্ল্যাক মার্সিডিজ’ গাড়িটি ব্যবহার করতে, কিন্তু অনুমতি পাননি।

২৭ জুলাই রবিবার গওসোল দম্পতির ঢাকায় পৌছার নতুন শিডিউল বহাল থাকলেও তার ৩ দিন আগেই এখন বৈরুত ছাড়বেন বলে জানা গেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, ২৩ জুলাই বুধবার লেবানন সময় বেলা পৌনে তিনটায় তার্কিশ এয়ারলাইন্স যোগে তুরস্ক রওয়ানা হবেন গওসোল-সাদিয়া। সেখানে ৩ দিন অবকাশ যাপনের পর তার্কিশেরই অন্য একটি ফ্লাইটে ২৭ জুলাই রবিবার ভোর ৪ টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। গত কয়েকদিন বৈরুতে অবস্থান করেই ঢাকায় কলকাঠি নাড়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়েছেন অপসারিত এই রাষ্ট্রদূত।

গওসোল আযম কর্তৃক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া দরিদ্র আবদুর রহমানকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাজানো জবানবন্দী আদায় করে তা প্রচার করা হয়েছে কয়েকটি মিডিয়াতে। নিজ গৃহকর্মী এই আবদুর রহমানকেই অন্যায়ভাবে বৈরুতের দূতাবাসে আটকে রেখেছিলেন গওসোল। আটক থাকা অবস্থায় আবদুর রহমানের চাচা সেগুনবাগিচা গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনেক দেন-দরবার করেন ভাতিজার মুক্তির জন্য। উল্লেখ্য, আবদুর রহমান স্টাইলে একই কান্ড সুইডেনেও ঘটিয়েছিলেন গওসোল দম্পতি।

সেখানকার গৃহকর্মী তৈয়বাকে দৈহিক নির্যাতনের পর সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্ত্রী সাদিয়াকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হলে স্ক্যান্ডাল ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে তৈয়বাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে মুখ বন্ধ করা হয় তখন। এদিকে গওসোল-সাদিয়ার নির্দেশে গত সপ্তায় বৈরুতে অপহৃত কমিউনিটি নেতা আলী আকবর মোল্লা এখন মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারে দিনাতিপাত করছেন।

দালাল সিন্ডিকেট কর্তৃক অপহরণের শিকার হবার পর লেবানিজ গোয়েন্দা বিভাগ তাঁকে উদ্ধার করে নিজস্ব হেফাজতে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যান সমিতির যুগ্ম আহবায়ক আলী আকবর মোল্লাকে বন্দীদশা থেকে মুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন দূতাবাসের বর্তমান ইনচার্জ নজরুল ইসলাম। লেবানিজ প্রশাসনের সাথে এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন তিনি।



(ওএস/এটিআর/জুলাই ২২, ২০১৪)