সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জে চাঁদা না দিয়ে মামলা দায়ের করার কারণে সন্ত্রাসীদের হামলায় গোলছড়া বেগম (৬৮) নামের এক মহিলা খুন হয়েছেন। 

এ ঘটনায় আরো ৩জন নারী ও শিশুসহ মোট ১০জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে নিহতের নাতিন খুকি আক্তার(২৫) কে আশংকাজনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আর নিহতের মেয়ে নাজমা বেগম(৪৫),সুফিয়া বেগম (৪০),নাতি মিষ্টার মিয়া(১৫),কাসেম মিয়া(২২),আনোয়ার মিয়া(২০),দিলদার মিয়া(১১) ও অন্যান্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ জসিম মিয়া(৩২) নামের এক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করাসহ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য আজ ০১.০৩.১৯ইং শুক্রবার দুপুর ২টায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

এ ব্যাপারে পুলিশ,বিজিবি ও এলাকাবাসী জানায়,জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নের বালিয়াঘাট গ্রামের নিহত গোলছড়া বেগমের মেয়ে নাজমা বেগম কাছে ১লক্ষ ২০হাজার টাকা চাঁদা চাওয়ার ঘটনায় বালিয়াঘাট গ্রামের রাশিদ মিয়ার ছেলে সীমান্ত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ এমএ রাজ্জাক স্বাধীন হরফে আব্দুর রাজ্জাকসহ তার বাহিনীর ১৯জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করার জের ধরে সন্ত্রাসী আব্দুর রাজ্জাক তার বাহিনী নিয়ে নাজমা বেগমের বাড়িঘর ভাংচুর করে।

আর এ ঘটনাটি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানোর কারণে আব্দুর রাজ্জাক প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে গতকাল ২৮.০২.১৯ইং বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য জসিম মিয়া, সুজন মিয়া, জজ মিয়া, সেলিম মিয়া, শামীম মিয়া, রুবেল মিয়া, হুমায়ুন মিয়া, তৌফিক মিয়া, হ্নদয় মিয়া, শহিদ মিয়া, জয় মিয়া, কদ্দুস মিয়াসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আবার নাজমা বেগমের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ভাংচুর করে।

এসময় দেশী অস্ত্র ও পাথর দিয়ে সন্ত্রাসীরা বৃদ্ধ গোলছড়া বেগমের মাথায় ও চোখে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে সন্ত্রাসী রাজ্জাক চলে যাওয়ার পর এলাকার লোকজন আহতদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

এ ঘটনার খরব পেয়ে রাত ১১টায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসী আব্দুর রাজ্জাকের চাচাতো ভাই জসিম মিয়াকে গ্রেফতার করে কিন্তু মূলহোতা আব্দুর রাজ্জাককেই গ্রেফতার করেনি।

এ ব্যাপারে নিহতের দুই মেয়ে নির্যাতিত নাজমা বেগম ও সুফিযা বেগম বলেন, চোরাচালান ও চাঁদাবাজির অবৈধ টাকা দিয়ে আব্দুর রাজ্জাক সবার মুখ বন্ধ করে দেয়, তাই আমরা তার চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের স্বীকার হয়ে মামলা করেও বিচার পাইনি বরং আমার মাকে হত্যা করা হয়েছে কারণ এদেশে কোন বিচার নাই।

নির্যাতিত সাংবাদিক সাবজল হোসেন বলেন, আব্দুর রাজ্জাকের চোরাচালান,চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় তার বাহিনী নিয়ে আমার উপর হামলা চালিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আমিও থানায় মামলা দিয়েছি কিন্তু পুলিশ মামলাটি এখনও পর্যন্ত রেকর্ড করেনি।

তাহিরপুর থানার ওসি তদন্ত আসাদুজ্জামান হাওলাদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,ময়না তদন্তের জন্য নিহতের লাশ মর্গে পাঠানোসহ ১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে,এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, আব্দুর রাজ্জাকের সোর্স কালাম মিয়াকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে বিজিবি জেলহাজতে পাঠানোর পর এলাকার মানুষের ওপর ঝুলুম,নির্যাতন ও চাঁদাবাজি বেড়ে যায়। এছাড়া চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে রাতারাতি কোটিপতি হওয়াসহ থানা ও আদালতে আব্দুর রাজ্জাক ও তার ভাই আব্দুল কদ্দুসসহ তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি,মাদক,কয়লা চোরাচালান ও সাংবাদিক নির্যাতনের মামলাসহ একাধিক লিখিত অভিযোগ থাকার পরও প্রশাসন নিরব।

(জে/এসপি/মার্চ ০১, ২০১৯)