টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই এলাকায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা (স্থিতাবস্থা) অমান্য করে আবু আহাদ খান পিন্টু ও উথান খান পুলিশি প্রহরায় পিন্টুর চার বোনের ওয়ারিশভূক্ত ভূমি জবর দখলের চেষ্টা করছেন। তারা প্রতিদিন পুলিশ ও গাজীপুর থেকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী এনে উল্লেখিত মৌজার গাছপালা বিক্রী করে অর্থ আত্মসাৎ করছেন।

গোড়াই মৌজার ৪.১২ একর ভূমির নিজেদের নামে খারিজ(মিউটেশন) করে খাজনা দিয়েও দখল পাচ্ছেন না চার ওয়ারিশানরা। উপরন্তু ওই ভূমি থেকে প্রতিপক্ষের লোকজন মূল্যবান গাছ-গাছরা কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই গ্রামের মরহুম আব্দুল কাদের খানের দুই ছেলে মৃত মহব্বত হোসেন খান ও আবু আহাদ খান এবং চার মেয়ে এনি খানম, এলি খানম, বেলি খানম ও মেরি খানম। এর মধ্যে মহব্বত হোসেন খান ও আবু আহাদ খান তাদের অংশের সম্পত্তি প্রায় সর্বাংশ (বাড়ি ব্যতিত) অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। তাদের চার বোন ওয়ারিশ হিসেবে গোড়াই মৌজার খতিয়ান-৮৪৪৯(ভিপি-১৯৭১), জেএলনং-১৮২ এর ৭টি দাগের(নং-৮১১৩, ৪৩৬৮, ৪৩৬৯, ৪৩৭৪, ৪৩৭৬, ৪৩৭৮ ও ৪৩৮৫) মোট ৪.১২ একর ভূমি নিজেদের নামে খারিজ(নাম জারি বা মিউটেশন) ও যথারীতি খাজনা পরিশোধ করে আসছেন। কিন্তু তাদের দুই ভাই মৃত মহব্বত হোসেন খান ও আবু আহাদ খান সঠিক তথ্য গোপণ করে পিতার সম্পত্তির সিংহভাগ অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রিত ভূমির মধ্যে ওয়ারিশান চার বোনের উল্লেখিত ভূমিও রয়েছে।

চার বোনের ওয়ারিশ হিসেবে পাওয়া ৪.১২ একর ভূমিতে বাঁশঝাড়, আম, জাম, কাঁঠাল, নিম সহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ রয়েছে। ওয়ারিশ হিসেবে ওই সম্পত্তির মালিকানা চার বোনের হলেও মৃত মহব্বত হোসেন খানের ছেলে উথান খান ও আবু আহাদ খান একটি নকল পর্চা তৈরি করে ওই সম্পত্তি নিজেদের দাবি করে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি দরখাস্ত দেয়। ওই দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে উথান খান ও আবু আহাদ খান স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় ওয়ারিশান বোনদের ভূমির মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করছেন।

ওয়ারিশান এনি খানম বলেন, আমার ভাই-ভাতিজা আমাদের সম্পত্তি জবরদখল করার হীন প্রয়াসে পুলিশের পাহারায় লাখ লাখ টাকা মূল্যের গাছ-গাছরা কেটে বিক্রি করছে। পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমার ভাই-ভাতিজাকে সহযোগিতা করছে। আমরা বাধা দিতে গেলে পুলিশ উল্টো আমাদেরকেই অহেতুক দোষারূপ করে তাড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উথাল খান বলেন, ওই ভূমি আমাদের পৈত্রিক। পৈত্রিক ভূমিতে লাগানো গাছই আমরা কেটে বিক্রি করছি। তাছাড়া আমার ফুফুরা তাদের ওয়ারিশ আগেই বিক্রি করে ফেলেছেন। তারা গাছ কাটতে বাধা দিতে পারে সেজন্য পুলিশি সহযোগিতা নিয়েছি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামস্ উদ্দিন(ওয়ারিশান বেলি খানমের স্বামী) জানান, তার স্ত্রী ও স্ত্রীর বোনদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে তাদের ভাতিজা ও ভাই পুলিশের সহায়তায় দামি গাছগুলো কেটে বিক্রি করছে। এ বিষয়ে আদালত ওইস্থানে স্থিতাবস্থা জারি করলেও পুলিশ তা অগ্রাহ্য করছে- বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়।

মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) একে মিজানুল হক জানান, ওই এলাকায় ওয়ারিশ নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে গাছ কেটে বিক্রি করা হচ্ছে এমন খবর তার জানা নেই। যদি এধরণের কোন অভিযোগ থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(আরকেপি/এসপি/মে ০২, ২০১৯)