লাশ কাটা ঘরের কায়েস আহমেদ নেই ২৭ বছর
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : বিখ্যাত গল্প ও গল্পগ্রন্থ 'লাশ কাটা ঘরের অমর স্রষ্টা কথাশিল্পী কায়েস আহমেদ। এই তো সেদিন না ফেরার দেশে চলে গেলেন কায়েস আহমেদ; দেখতে দেখতে ২৭ বছর কেটে গেল! আজ ১৪জুন শুক্রবার বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য ওই কথাশিল্পী কায়েস আহমদের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯২ সালের ১৪জুন মাত্র চুয়াল্লিশ বছর বয়সে এই প্রথিতযশা কথা সাহিত্যিক আমাদের ছেড়ে চলে যান। ১৯৪৮ সালের ২৫মার্চ পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতার নাম শেখ কামাল উদ্দিন আহমদ এবং মাতার নাম ওলিউন্নেসা।
জীবনের এই স্বল্প পরিসরে তাঁর লেখা ছোট গল্প, উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের ভান্ডারে অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। জীবন সংগ্রামে লড়াকু সাধারণ মানুষ, প্রান্তিক মানুষ ও চারপাশের সমাজই তাঁর লেখার প্রধান উপজীব্য। এছাড়া সাতচল্লিশের দেশভাগের ক্ষত-বিক্ষত, শিকরবিহীন মানুষের অহর্নিশ আর্তনাদও তাঁর সৃষ্টির অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে।
কায়েস আহমেদের অমর সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে উপন্যাস নির্বাসিত একজন, দিনযাপন, গল্পগ্রন্থ অন্ধ তীরন্দাজ, লাশকাটা ঘর, সম্পাদনা গ্রন্থ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া তাঁর অগ্রন্থিত বহু গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র রয়েছে। যা প্রকাশিত হয়েছে 'কায়েস আহমেদ সমগ্র' এবং 'অগ্রন্থিত কায়েস আহমেদ'- এ।
দেশবিভাগের যে যন্ত্রনা অহর্নিশ তাঁকে কাতর করতো, তারই একটি ছবি রয়েছে তাঁর লেখা 'কুষ্ঠব্যাধি'-তে। কুষ্ঠব্যাধির মূল চরিত্রের নাম 'চন্দ্রমোহন', যে দেশভাগের সময় তার ভিটেমাটি, গাছপালা সব ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল ভারতে।
আজও আমরা এই স্বাধীন বাংলায় কায়েস আহমেদের চন্দ্রমোহনকে দেখতে পাই। তবে একজন চন্দ্রমোহন নয়, হাজার হাজার চন্দ্রমোহন, লাখ লাখ চন্দ্রমোহ; যারা এখনো নির্যাতিত হয়ে কিংবা মোহে দেশের মাটি, বাতাস, ভালোবাসা অস্বীকার করে পালায়, শিকড় ছিঁড়ে দৌড়ায়!
১৯৯২ সালে কায়েস আহমেদের মৃত্যুতে সারা দেশের কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সকলের বুক চিরে হাহাকার উঠেছিল; সকল পত্রিকার প্রথম পাতায় ছিল কায়েস আহমদ। আজ আর তাঁদের দেখা নেই। তাঁরাও ভুলে যেতে বসেছে কায়েস আহমেদের জন্ম-মৃত্যুর সময়।
কায়েস আহমেদ আমাদের মাঝে নেই। তবুও তিনি তাঁর সৃষ্টি দিয়ে অমর হয়ে থাকবেন আমাদের মাঝে, বাংলা সাহিত্যে। কায়েস আহমেদের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
[এই প্রতিবেদনের সাথে খ্যাতিমান গল্পকার কায়েস আহমেদের যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেই ছবিটি ক্যামেরা বন্দী করেছিলেন তাঁরই প্রিয়ছাত্র ও এই সময়ে দুই বাংলার খ্যাতিমান আবৃত্তি শিল্পী বেলায়েত হোসেন।]