শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুমন কুমার পোদ্দারকে পিটিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে। একজন চিকিৎসককে প্রকাশ্যে মারধর করায় জেলা ব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন, জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ, হিন্দু-বৌদ্য-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও শরীয়তপুর জেলা পূঁজা উদযাপন কমিটি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানান, সম্প্রতি একটি মারামারির ঘটনায় হাসপাতাল থেকে মেডিকেল সনদ প্রদান নিয়ে ২১ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাসিক আইন শৃংখলা সভায় সুমন কুমার পোদ্দারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে।

বিষয়টি ডা. সুমন অবগত হওয়ার পরে মুঠোফোনে অনল কুমার দে‘র সাথে কথা বলতে চাইলে অনল কুমার সুমনকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সংলগ্ন বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে একটি দোকানে যেতে বলেন। সুমন পোদ্দার বিকেল ৫টার দিকে ওই দোকানে গেলে আওয়ামীলীগ নেতার সাথে বাক-বিতন্ডায় জরান। এক পর্যায় অনল কুমার দে ডা. সুমনকে একটি কাচের গ্লাস ছুড়ে মারে এবং তাকে কিল ঘুষি দিয়ে গলা চেপে ধরেন। তখন অনল দে‘র সাথে থাকা সবুজ দত্ত, মাসুদসহ আরো কয়েকজনে মারপিট শুরু করলে ডা. সুমন আত্ম রক্ষার্থে দৌড়ে রাস্তায় এসে তাজুল ফকির নামে একজন ব্যবসায়ীর মোটর সাইকেলে চড়ে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। এ ঘটনা চারিদিকে ছরিয়ে পরলে সন্ধ্যার পরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ডা. সুমনকে দেখতে আসেন সিভিল সার্জন, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, থানার ওসি, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোক।

ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে এসে আমার কাছ থেকে নানা ধরনের সুবিধা নিতে চাইতেন। যখনই আমি তার দাবি পালন করতে না পারি তখনই সে একটা কোরাম তৈরী করে আইন শৃংখলা সভা সহ বিভিন্ন স্থানে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন। সে হাসপাতালে এসে সব চাইতে বেশী সুবিধা নেয় আমার কাছ থেকে। এর পূর্বে চাপাতি দিয়ে কোপানো মারাত্মক জখম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক রুগিকে সাধারণ সার্টিফিকেট দিতে বললে আমি তার কথায় রাজি না হয়ে যথাযথ সার্টিফিকেট দেই। এতে অনল বাবু আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। আজ সে আমাকে অন্যায়ভাবে মারপিট করেন, আমার গলা চেপে ধরেন।

আমি একজন প্রথম শ্রেনির সরকারি কর্মকর্তা। আমাকে সে জনসমক্ষে শারিরীক নির্যাতন করে সামাজিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করেন। সে আমাকে মালাউন বলে গালি দেন। আমাকে দেশ ছারা করার হুমকি দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কি অনল বাবুকে জেলার সাধারণ সম্পাদক করেছেন মানুষকে মারপিট করার জন্য? আমি এ ঘটনার বিচার চাই। আমি আইনের আশ্রয় নিব, মামলা করবো।

শরীয়তপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মানিক ব্যানার্জী এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপণ করেছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বি.এম.এ) এর শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি ডা. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের একজন সহকর্মী শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক কর্মকর্তা ডাক্তার সুমন কুমার পোদ্দার জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি বি.এম.এ‘র কেন্দ্রীয় নের্তৃবৃন্দের সাথে আজ রাতের মধ্যে কথা বলে কর্মসূচী ঘোষনা করবো।

শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শরীয়তপুর জেলা পরিষদের সদস্য কামরুজ্জামান উজ্জল বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক এহেন ঘটনা জানার পরে আমরা মর্মাহত হয়েছি। এমন অনভিপ্রেত ও গর্হিত বিষয়টির নিন্দা জানাই।

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. খলিলুর রহমান বলেন, কেউই আইনের উর্ধ্বে না, আইন কারো হাতে তুলে নেয়াও ঠিকনা। সুমন আমাদের সহকর্মী, সে ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে যদি আইনী সহায়তা চায় তাহলে আমরা তার পাশে থাকব। আমরা বি.এম.এ‘র কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে মানববন্ধন কর্মসূচি বা স্মারকলিপি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ বা মামলা দায়ের হয়নি। তবে ডা. সুমন কুমার পোদ্দারের বড় ভাই রঘুনাথ পোদ্দার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে জানিয়েছেন, আমরা এখন শরীয়তপুর সদর পালং থানায় এসে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বেও অনল কুমার দে শরীয়তপুর জেলার একজন অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট ও এল,জি,ই,ডি‘র একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছিলেন।


(কে/এসপি/জুলাই ২২, ২০১৯)