রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : চাঁদার দাবিতে বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় সাংবাদিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় ৩৯ দিনেও পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উপরন্তু প্রভাবশালী আসামী ইয়ারব হোসেন বাদিকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।

অভিযোগ, পুলিশ ও জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য দিকে ঘোরাতে সাতদিনের মধ্যে হত্যা করার হুমকির কথা লিখে চিঠি ও কাফনের কাপড় পাঠানোর নাটক সাজিয়েছে এক সময়কার তুজুলপুর মোড়ের পান বিক্রেতা পঞ্চম শ্রেণী অনুত্তীর্ণ ইয়ারব হোসেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথরঘাটা গ্রামের আজাহারুল ইসলাম জানান, দাবিকৃত দু’ লাখ টাকা না দেওয়ায় গত পহেলা জুলাই রাত দেড়টার দিকে সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন, গ্রাম পুলিশ কামরুল ও হেলাল হোসেনসহ ১০/১২জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী তার বাড়িতে যেয়ে দরজা ভাঙচুর করে। তাকে মারপিট করে ফ্রিজ আলমারী ও টেলিভিশনসহ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। ইয়ারব হোসেন তার আলমারিতে থাকা টাকা ও সোনার গহনাসহ এক লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ২৪ জুন আদালতে মামলা করলে বিচারকের নির্দেশে গত ২ জুলাই সদর থানায় মামলাটি(৪নং) রেকর্ড করা হয়। খবর পেয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ইয়ারব হুমকি দেওয়ায় ১৫ জুলাই তিনি সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। এজাহারভুক্ত আসামী হওয়ার পরও গত ২৭ জুলাই আবাদের হাটে আওয়ামীলীগ নেতা নজরুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে আহুত সমাবেশে পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় সাংসদ, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইয়ারব ডায়ার্সে অবস্থান করলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি।

এ নিয়ে পত্র পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হলে বিপাকে পড়ে সাত দিনের মধ্যে তাকে হত্যার হুমকি সংক্রান্ত চিরকুৃটের সঙ্গে মসজিদের বারান্দায় কাফনের কাপড়, আগরপাতি ও গোলাপজল রেখে কাল্পনিক নাটক সাজিয়ে জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন। তাকে গ্রেপ্তার করে রিমাণ্ডে নিলে বেরিয়ে আসবে কাফনের কাপড় পাঠানো ও হত্যার হুমকির নেপথ্যের ইতিহাস।

তুজুলপুর গ্রামের শাকিম গাজী, আকবর হোসেন, আব্দুল আজিজসহ কয়েকজন জানান,তুজুলপুরের ইয়ারব হোসেন স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না পারায় অভাবের তাড়নায় ঝাউডাঙার আশুতোষ ঘোষের সঙ্গে পানের ব্যবসা শুরু করেন। তুজুলপুর মোড়ে করেন একটি পান বিড়ির স্টল। তিনি ঝাউডাঙার একটি হোটেলে ম্যাচিয়ারিও করেছেন। সেলাই করেছেন দর্জির দোকানে ব্লাউজ ও জামার বোতাম ঘর।

১৯৯৪ সালে সাতক্ষীরা শহরের আব্দুর রাজ্জাক পার্কে জামায়ত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর জনসভায় যোগ দেওয়ার কিছুক্ষণ পর পার্কের প্রাচীর ভাঙচুরের ঘটনায় প্রতিবাদকারি মুক্তিযোদ্ধা হাসনে জাহিদ জজসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে জখমকারীদের ধাওয়া করলে ইয়ারব পাঞ্জাবী গুটিয়ে ভৌঁ দৌড় দিয়ে পালিয়ে কদমতলা বাজারের একটি দোকানে ঢুকে শার্টার টেনে দিয়ে আত্মরক্ষা করে বলে প্রচার রয়েছে। সাতক্ষীরার এক দাদা সাংবাদিকের তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করার সুবাদে ঝাউডাঙা বাজারের হিন্দু ব্যবসায়িদের জিম্মি করে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে ইয়ারবের বিরুদ্ধে।

তুজুলপুরের এক পাচার হওয়া নারীর বাবা ও মাকে মারপিট করে ক্লাবে আটক রেখে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য জোরপূর্ভক স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মাদক বিরোধী অভিযানের নামে ওই পাচার হওয়া নারীর বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেওেঙ গুড়িয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। মামলা তুলে না নেওয়ায় ওই পাচার হওয়া নারী, তার বাবা, মা ও ভাইয়ের নামে অন্য নারী দিয়ে থানায় পাচারের মামলা দায়ের করার নেপথ্যের নায়ক তিনি। এ ছাড়া গত বছর তুজুলপুর স্কুল মাছে সার্কাস খেলার অন্তরালে দীর্ঘদিন ধরে ওয়ান টেনসহ কয়েক রকমের জুয়া খেলানোর প্রধান ভূমিকা পালন করেন ইয়ারব।

এক সময় সীমান্তে চোরাঘাট মালিক, মাদক ব্যবসায়িদের কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি, না পছন্দের লোকজনদের জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মী বানিয়ে পুলিশকে দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া ও ছাড়িয়ে নেওয়া বাণিজ্য করে বর্তমানে ইয়ারব দু’ কোটি টাকারও বেশি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। সর্বপরি এলাকার কুখ্যাত পাচারকারি আজাদের নোহা গাড়িতে যেয়ে বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রির হাত থেকে ক্রেস্ট নিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর পুরষ্কারপ্রাপ্ত বলে ফেইসবুক আইডিসহ গণমাধ্যমে প্রচার করে নিজের প্রভাব বাড়িয়েছেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয় পার না হওয়া ইয়ারব ২০০৫ সালে ঢাকার একটি পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হতে ১৯৯০ সালে তুজুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করা একই এলাকার শাজাহান সিরাজের এসএসসি শিক্ষা সনদ ফটোকপি করে ঘষামাজা শেষে তৎকালিন সাতক্ষীরা রিপোর্টার্স ক্লাবের পিওন আব্দুল ওয়াদুদের মাধ্যমে ডাঃ লিপিকা বিশ্বাসের কাছ থেকে অরিজিনাল ছাড়াই সত্যায়িত করে নিয়ে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। সত্যায়িত সনদে শাজাহানের নিবন্ধন ও ক্রমিক সংখ্যা পরিবর্তণ করলেও রোল নং ১১৯ ঠিক রাখা হয়। জন্ম তারিখ দেওয়া হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি।

তার কথামত না চলায় কাছের বন্ধুকেও বিপাকে ফেরতে পিছপা হননি ইয়ারব। বর্তমানে তিনি ঝাউডাঙার নুর মোহাম্মেদের ছেলে ২০১৪ সালে ভাটপাড়ায় অস্ত্র ও গুলিসহ জনতার হাতে আটক আরিফকে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে রেখে থানাসহ বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়ান। ইয়ারবের বিরুদ্ধে উপরিলিখিত অভিযোগগুলো ঝাউডাঙাবাসীর মুখে মুখে।

যদিও ইয়ারব হোসেন সাংবাদিকদের কাছে তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি কখনো জামায়াত করেননি। তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে চাঁদাবাজির মামলা দেওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করবে কেন? কাফনের কাপড় কারা পাঠিয়েছে তা পুলিশ তদন্তে নেমেছে।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ১০, ২০১৯)